বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ কেন? এই প্রশ্ন তুলে দিল্লি হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে এক জনস্বার্থ মামলা। সেই মামলা গ্রহণ করে দিল্লি হাইকোর্ট আজ শুক্রবার জোটবদ্ধ ২৬ বিরোধী দলকে নোটিশ পাঠিয়েছে।
দেশের ২৬টি বিরোধী দল সম্প্রতি জোটবদ্ধ হয়েছে। তারা নতুন জোটের নাম রেখেছে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স।’ এই পাঁচ শব্দের আদ্যাক্ষর ‘ইন্ডিয়া’।
দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মা এ বিচারপতি সঞ্জীব নারুলার ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়ে অভিমত জানতে চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশনকেও।
মামলাকারী গিরীশ ভরদ্বাজের অভিযোগ, বিরোধী দল তাদের জোটের নাম রেখেছে দেশের নামে। ‘ইন্ডিয়া’ নামকরণের মধ্য দিয়ে তারা ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে। এর ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে শান্তি বিঘ্নিত হবে। স্বচ্ছতা নষ্ট হবে। মানুষ বিভ্রান্ত হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে।
আবেদনে আবেদনকারী বলেছেন, ১৯৫০ সালের ‘দ্য এমব্লেমস অ্যান্ড নেমস’ (অবৈধ ব্যবহার রোধ) আইন মোতাবেক ‘ইন্ডিয়া’ নাম ব্যবহার করা যায় না।
আবেদনকারী গিরীশ ভরদ্বাজ এই মামলায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখ করে বলেছেন, জোটের এই নামকরণের মধ্য দিয়ে তাঁরা বোঝাতে চাইছেন বিজেপি, এনডিএ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের দেশের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছেন।
গিরীশ ভরদ্বাজ এই দাবিও করেছেন, রাহুল গান্ধীর মন্তব্য আরও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। কেননা রাহুল বলেছেন, আগামী দিনের নির্বাচন হবে এনডিএর সঙ্গে ইন্ডিয়ার।
আবেদনকারী আদালতকে জানিয়েছেন, এই আপত্তির বিষয়টি তিনি দেশের নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ বলে চিহ্নিত হওয়ায় বিজেপি চিন্তিত। প্রধানমন্ত্রী নিজেও। বারবার তাঁরা এই বিষয়ের অবতারণা করছেন। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, নামে ‘ইন্ডিয়া’ থাকলেই তা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে বোঝায় না। নামে কিছু আসে যায় না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামেও ‘ইন্ডিয়া’ ছিল। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদ্দিন বা পিপলস ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়াতেও ‘ইন্ডিয়া’ আছে।
এর পর নরেন্দ্র মোদি একদিন বলেন, গান্ধীজি ‘কুইট ইন্ডিয়া’ বা ভারত ছাড় আন্দোলন করেছিলেন। ইন্ডিয়া জোটকেও ভারতছাড়া করতে হবে। বিভিন্ন রাজ্যের এনডিএ নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি মিলিত হচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার বিহারের জোটসঙ্গীদের নিয়ে আয়োজিত এমনই এক বৈঠকে তিনি বলেন, বিরোধী জোটকে ‘ইন্ডিয়া’ বলে ডাকার দরকার নেই। বরং তাদের ‘ঘামন্ডিয়া’ (উদ্ধত) বলে ডাকুন।
এর আগে মোদি বলেছিলেন, তিনি বিরোধী জোটকে ‘ইন্ডিয়া’ বলে ডাকতে চান না। ওটা কংগ্রেসের তৈরি পুরনো জোট ‘ইউপিএ’রই নামান্তর। ওই নামেই ডাকবেন।
বেশ বোঝা যাচ্ছে, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।