ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁও জেলার শহর নুহতে বস্তি উচ্ছেদের পর এবার ৪৫ দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। শনিবার শহরটির নালহার রোডের শহিদ হাসান খান মেওয়াতি (এসএইচকেএম) গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজের পাশের এই দোকানগুলো ভেঙে দেওয়া হয়। দোকারগুলো অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় এসডিএম ও নগর পরিকল্পনা বিভাগের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের এনফোর্সমেন্ট শাখার একটি দল এসএইচকেএম গর্ভমেন্ট মেডিকেল কলেজের কাছে বাজার অঞ্চলে প্রবেশ করে। এরপরই বিভিন্ন ভারী মেশিন আর শ্রমিকদের সাহায্যে দোকান ধ্বংসের অভিযান চালানো হয়।
সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট অশ্বনী কুমার জানিয়েছেন, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টারের নির্দেশে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু দোকান নুহের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি। কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, এই অধিগ্রহণ ২.৫ একরজুড়ে ছিল। যার পুরোটাই অবৈধ নির্মাণ।’
স্থানীয় বিধায়ক ও কংগ্রেস বিধায়ক আফতাব আহমেদ এই ধরনের পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ধ্বংস করার একটি ভিডিও টুইট করে বলেন, নুহতে শুধু গরিবদের বাড়িই ভাঙা হচ্ছে না বরং সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আস্থাও নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনিক ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য সরকার ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি দমনমূলক নীতি। এর আগে বৃহস্পতিবার তাউরু শহর ও পার্শ্ববর্তী নুহ জেলার অন্যান্য অঞ্চলে বেদখল সরকারি জমিতে প্রায় ২৫০টি কুঁড়েঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।
হরিয়ানার নুহ অঞ্চলটিতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় গত সোমবার। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) মিছিলে আক্রমণের পর গুরুগ্রাম ও তার আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুজন হোম গার্ড ও একজন ইমামসহ মোট ছয়জন নিহত হন।
নুহ অঞ্চলের এই সহিংসতাকে একটি ‘বিগ গেম প্লেন’ বলে উল্লেখ করেছেন হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ। শুক্রবার সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় মানুষ মন্দিরের পাশের পাহাড়ে উঠছিল। গুলি চালিয়েছিল সেখান থেকেই। ছাদে সংগ্রহ করা হয়েছিল পাথর। তাদের হাতে লাঠি ছিল। প্রবেশপথে জড়ো হচ্ছিল। আমরা তথ্য পাচ্ছি গুলি চালানোর ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল।’ সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া এসব সম্ভব নয় বলে জানান ভিজ। বলেন, ‘কেউ নিশ্চয়ই এসবের ব্যবস্থা করেছে। নাহয় অস্ত্র এলো কোথা থেকে?’ এ ব্যাপরে তথ্য আর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে একদিনে নুহের পুলিশ সুপার নরেন্দ্র সিং বিজার্নিয়া জানান, সংঘর্ষের পিছনে কোনো মাস্টারমাইন্ড থাকার কোনো ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি।
ভিজ অবশ্য জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ তদন্ত না করে হরিয়ানা সরকার তাড়াতাড়ি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে না। সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ১০২টি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গ্রেফতার হয়েছে ২০২ জন। প্রতিরোধমূলক আটক রয়েছে ৮০ জন। পুলিশ সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইছে ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সোমবার থেকে সংঘর্ষ কভার করতে নুহতে আসা সাংবাদিকদের তদন্তে সহায়তা করার আহ্বান জানান। কর্তৃপক্ষকে ভিডিও এবং ফিড সরবরাহ করার কথা বলেন।