বুধবার , ১৬ আগস্ট ২০২৩ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

আফগান নারীর পায়ে তালেবানের ১৬ শেকল

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
আগস্ট ১৬, ২০২৩ ৪:৫০ অপরাহ্ণ

আফগানিস্তানে তালেবান রাজত্বের দুই বছরেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নারীরা। গুনে গুনে একে একে ১৬টা নিষেধাজ্ঞার শেকলে বেঁধে ফেলেছে আফগান নারীদের পা।

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর ছেড়ে ঠাঁই হয়েছে অন্দরমহলের চার দেওয়ালে। শখ-আহ্লাদ-স্বাধীনতা সব চোখের জল হয়ে ভেসে যাচ্ছে হেঁসেলের ধোঁয়ায়। যারা পারছেন পালিয়ে যাচ্ছেন দেশ ছেড়ে। সংখ্যায় একেবারেই কম।

বেশিরভাগ নারীই ডুকরে কাঁদছেন তালেবানের অগ্নিচক্ষুর আড়ালে। গত দুই বছরের প্রায় প্রতিমাসেই একটা একটা করে ডিক্রি জারি করেছেন তালেবান নায়করা। শুরুটা হয় শুরুর মাসেই।

মন্ত্রিসভায় নারী থাকা যাবে না: ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা দখলের ২১ দিনের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন প্রকৃতি ঘোষণা করে তালেবান। যেখানে কোনো নারীদের প্রতিনিধিত্ব রাখা হবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভায় ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারসহ একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রতিবাদে অংশ নেওয়া যাবে না: সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি বিবৃতি জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, কোনো নারী কোনো প্রতিবাদে অংশ নিতে পারবে না। ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

খেলাধুলা বা জিমে যাওয়া নিষিদ্ধ: একজন তালেবান কর্মকর্তা ঘোষণা করেন, নরীদের জন্য খেলাধুলা অত্যাবশ্যকীয় নয়। আরও বলেন, নারীদের প্রকাশ্যে কোনো খেলায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে না। তাদের জিমে যেতেও নিষেধ করা হয়। ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে খেলাধুলা ও জিমে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

ক্লাসে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়তে পারবে না: ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলোতে পর্দা ব্যবহার করে আলাদা করা হয়। পরে তালেবানরা ক্লাস পুনর্গঠন করে। ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা পাঠের ব্যবস্থা করা হয়।

ষষ্ঠ শ্রেণির বাইরে পড়া হবে না মেয়েদের: তাদের কঠোরতম পদক্ষেপগুলোর একটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছেলেদের ক্লাস পুনরায় শুরু করার অনুমতি দিলেও ষষ্ঠ শ্রেণির বাইরে মেয়েদের কোনো অনুমতির কথা উল্লেখ করা হয় নি। ২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এই নির্দেশ জারি করে তালেবান।  মেয়েরা এখনো স্কুলে ফিরে যেতে পারেনি।

সিভিল সার্ভিসসহ এনজিওতে নিষেধাজ্ঞা: ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন ডিক্রিতে তালেবান  বলে, সিভিল সার্ভিসে কোনো নারী থাকা যাবে না। বেশিরভাগ নারী কর্মচারীকে একটি পৃথক কর্মক্ষেত্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোতেও নারীদের কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়।

বন্ধ করেছে নারীদের আশ্রয়কেন্দ্র : সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের সমর্থন ও আশ্রয় দেওয়ার জন্য কিছু জায়গায় ‘নিরাপদ বাড়ি’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২১ সালের ১ অক্টোবর তালেবান সেগুলো সব বন্ধ করে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কোর্সের ওপর নিষেধাজ্ঞা : ২০২১ সালের ২ অক্টোবর মেয়েদের জন্য কৃষি, পশুচিকিৎসা বিজ্ঞান, নির্মাণ ও খনির প্রকৌশল, অর্থনীতি ও সাংবাদিকতার মতো কোর্সগুলো নিষিদ্ধ করা হয়।

মুখ না ঢেকে ট্যাক্সিতে চড়া যাবে না: চালকদের বলা হয়েছিল পুরোপুরি মুখ না ঢাকলে নারীদের যেন ট্যাক্সিতে না নেওয়া হয়। পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের ৪৫ মাইলের (৭২ কিলোমিটার) বেশি যাত্রা করাতে নিষেধ করা হয়। ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুরো আফগানিস্তানেই এই আইন জারি করে তালেবান।

বিদেশ সফর বন্ধ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, আফগানিস্তানের বাইরে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া যেতে নতুন নিষেধাজ্ঞার শেকলে বাঁধা পড়ে নারীর পা। ফলে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে মেয়েদের পড়ার সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়।

ড্রাইভিং লাইসেন্সে নিষেধাজ্ঞা: ৩ মে ২০২২। কাবুল ও অন্যান্য প্রদেশে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্সে প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

টিভিতে উপস্থাপনার সময় মুখ দেখানো যাবে না: ১৯ মে ২০২২। সব নারী টিভি উপস্থাপককে সম্প্রচারণের সময় মুখ ঢেকে রাখতে বলা হয়। তালেবানের উপমন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আদেশটি জারি করে।

বিনোদনের জায়গায় নিষেধাজ্ঞা : ১০ নভেম্বর ২০২২। তলেবানরা আফগান নারীদের পাবলিক পার্ক ও বিনোদনের জায়গাগুলোতে প্রবেশ করতে নিষেধ করে।

উচ্চশিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা : তলেবানরা নারীদের জন্য উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ থাকবে। ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে এই নয়া ঘোষণা দেয় তালেবান।

বিউটি পার্লারে নিষেধাজ্ঞা: ২০২৩ সালের ৪ জুলাই বিউটি পার্লারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এক মাসের মধ্যে সব পার্লার বন্ধ করতে বলা হয়। ফলে ৬০ হাজার নারীর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকের জীবন বিষণœ হয়ে পড়ে।

 

সর্বশেষ - আইন-আদালত