দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে নেত্রকোনায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে হেলমেট পরে দুর্বৃত্তরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন। গতকাল শনিবার সকালে শহরের বনোয়াপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
দুপুরে পুলিশ বিএনপির ৫০০ জনকে আসামি করে নাশকতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে ছয়জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সে নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকাল পৌনে আটটার দিকে শহরের বনোয়াপাড়া মোড় এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল হক ও সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীর নেতৃত্বে কর্মসূচি শুরু হয়। প্রায় ২৫ মিনিট পর সেখান থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। ওই মিছিলে অংশ নেওয়া কয়েকজনের হাতে লাঠিসোঁটা ও পাইপ দেখা যায়।
নেত্রকোনায় বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপির ৫৩১ নেতা-কর্মীর নামে মামলা, গ্রেপ্তার ৬
মিছিলটি আবু আব্বাছ ডিগ্রি কলেজের সামনে শেষ হলে সেখান থেকে নেতা-কর্মীরা চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় বনোয়াপাড়া সিএনজিস্টেশন এলাকায় দুটি মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পরা পাঁচজন যুবক এসে সড়কের পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনে দাঁড়ান। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি মোটরসাইকেলে করে দুজন দক্ষিণ দিকে চলে যান। অন্য মোটরসাইকেলে তিনজনের মধ্যে পেছনে বসা যুবক নেমে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এ সময় একটি কালো পলিথিনে আরও কয়েকটি ককটেল–জাতীয় বস্তু ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য।
সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ এসে যিনি ককটেল ফাটিয়েছেন তাঁকে ধরার চেষ্টা চালায়। একজন পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তাঁর হাতে আঘাত করেন। কিন্তু তিনি মোটরসাইকেলে করে চলে যান। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপির ছয়জনকে আটক করে।
এই ঘটনায় গতকাল দুপুরে নেত্রকোনা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করে নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, দুটি ককটেল বিস্ফোরিত, চারটি অবিস্ফোরিত ককটেল লাল রঙের স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায়, কাঠের বাঁটযুক্ত ২৭ ইঞ্চি লম্বা একটি লোহার দা, পাঁচটি লোহার পাইপ, ৫৩টি বাঁশের লাঠি ও এক বস্তা ইটের টুকরা উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম হিলালীর দাবি, গতকাল শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন শেষে নেতা-কর্মীরা ফিরে যাচ্ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন দুটি মোটরসাইকেলে হেলমেট পরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। পুলিশের ধাওয়ায় শ্রমিক দলের নেতা খায়রুল ইসলাম ও শামছু মিয়া, ছাত্রদল নেতা রাকিব মিয়া ও রফিকুল ইসলাম, যুবদলকর্মী বজলুর রাশেদসহ আটজন আহত হন। তাঁরা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনায় পুলিশ অহেতুক বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
বিএনপির এই নেতা আজ রোববার সকালে মুঠোফোনে বলেন, নাম উল্লেখ করা ৩১ জন আসামির মধ্যে মো. সুজন চৌধুরী, মো. রফিক মিয়াসহ কয়েকজন গতকাল কর্মসূচিতে অংশ নেননি। গতকাল রাতে পুলিশ কুড়পাড়া, সাতপাই, পারলাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে হয়রানি করছে।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কোনো মিথ্যা বা কাল্পনিক মামলা দেওয়া হয়নি। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানের নামে জনমনে ভয়সহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।