বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গরিব ও দুস্থ আরও ৩৯ জন রোগীর বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাবরিনা সোবহান রোডে অবস্থিত বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে দিনব্যাপী এ ফ্রি অপারেশন করা হয়। যৌথভাবে এ অপারেশনের আয়োজন করেছে বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশন এবং এ কে এম আবু তাহের ফাউন্ডেশন।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক পরিচালক এবং ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. সালেহ আহমদের তত্ত্বাবধানে এ সার্জারিতে অংশ নেন ডা. রুবিনা আক্তার ও ডা. মজুমদার গোলাম রাব্বি এবং ডা. তাসরুবা শাহনাজ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৩ জন পুরুষ ও ১৬ জন নারীসহ মোট ৩৯ জন রোগীর চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। এর আগে বিভিন্ন সময় ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে বিনামূল্যে এই হাসপাতালে এনে ২ হাজার ৬৩৯ জনের বেশি রোগীর বিনামূল্যে অপারেশন করা হয়েছে।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক পরিচালক এবং ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. সালেহ আহমদে বলেন, গত ১৪ জুলাই আমরা কুমিল্লার বরুড়ার হরিপুর আগানগর উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি আই ক্যাম্প করেছিলাম। ওই ক্যাম্পে ১৬০০ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৩৪১ জন রোগীকে ছানি, নেত্রনালি ও মাংস বাড়ার কারণে অপারেশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। তাদেরই ভাগ করে এবারের ব্যাচে বিনামূল্যে ৩৯ জন রোগীর চোখের ছানি অপারেশনের করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের খরচেই তাদের নিয়ে আসি ও অপারেশন শেষে বাড়ি দিয়ে আসি। অপারেশনসহ সব খরচ আমরাই বহন করি। বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালের একটি ফ্রি ফান্ড ও যাকাত ফান্ড রয়েছে। যারা যাকাতের যোগ্য তাদের আমরা সেখান থেকে সাহায্য করি। আর যারা যাকাতের যোগ্য না যেমন অমুসলিম, তাদের আমরা আমাদের ফ্রি ফান্ড থেকে সাহায্য করি। যারা এ আই ক্যাম্প করতে চায়, তারা আহ্বান জানালে আমরা তাতে সাড়া দেই। আমাদের এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফাইজা রহমান বলেন, গরিব-দুস্থ ও অন্ধ রোগীদের চক্ষু চিকিৎসার সাহায্যার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া নেওয়া। দুস্থদের সেবায় অনেক আগ থেকেই এ ধরনের প্রক্রিয়া চলে আসছে। সারাদেশে বিনামূল্যে এ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই ক্যাম্পের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৪৫ জনের বেশি রোগীর বিনামূল্যে অপারেশন করা হয়েছে।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার হরিপুর থেকে বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন করতে আসা মালেক মিয়া (৭০) বলেন, ‘গত ৩-৪ মাস ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছি। টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা করাইতে পারিনি। পরে বসুন্ধরার বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসার ক্যাম্পে চোখ দেখাতে গেছিলাম। সেখান থেকে চোখ অপারেশন করতে বলা হয়। এরপর তাদের মাধ্যমেই এখানে বিনামূল্যে এখন চোখের অপারেশন করতে পেরেছি। আজ আরও অনেকে অপারেশন করাবে। এটা আমাদের মতো গরীব মানুষের জন্য অনেক উপকার হয়েছে। আল্লাহ বসুন্ধরা হাসপাতালের মালিকদের সব সময় ভালো রাখুক।’
একই এলাকার তরুণী পপি আক্তার (৩০) বলেন, ‘জন্ম থেকে একটি চোখে দেখতে পাই না। গত কয়েক বছর ধরে অণ্য চোখটিও নষ্ট হয়ে গেছে। টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তাই কিছুদিন আগে আমাদের এলাকায় বসুন্ধরা আই হসপিটালের আই ক্যাম্প হয়। পরে সেখানে গিয়ে বিনামূল্যে চোখ পরীক্ষা করিয়ে ছিলাম। তারা আমাকে ঢাকা আসতে বলেছে। তাদের মাধ্যমেই এখন চোখের অপারেশন করতে এসেছি। এখানকার ডাক্তার, নার্সদের সবার ব্যবহার অনেক ভালো লাগছে। আশা করি আল্লাহর রহমতে তাদের বসুন্ধরা হাসপাতালের ডাক্তারদের উছিলায় আমি আবার দেখতে পারবো।’
এ সময় পপির চাচী (৫০) জুলেখা খাতুন বলেন, ‘পপি এখন একটুও চোখে দেখতে পান না। তার পরিবারেও তেমন কেউ নাই এই মেয়েটার পাশে দাঁড়াবে। অবশেষে এই হাসপাতাল দাঁড়িয়েছে। তাদের উছিলায় যদি মেয়েটা চোখে দেখতে পান, এছাড়া আর কোনো গতি নাই আমাদের। তাই গরিব ও দুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসার করানোর জন্য আল্লাহ এদের ভালো করুক এই দোয়া করি।’