রাজধানীর উত্তরায় প্রকাশ্যে অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের গাড়ি থেকে ছিনতাই হয় ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উদ্ধার হওয়া এই টাকা আদালতের নির্দেশে এরই মধ্যে বুঝে পেয়েছে মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেড। তবে ঘটনার ৬ মাস পার হলেও এখনো উদ্ধার হয়নি ছিনতাই হওয়া আরও তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা। এমনকি গ্রেফতার হননি ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজন আসামি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, ঘটনার সঙ্গে আরও দুই থেকে তিনজন জড়িত রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। ছিনতাই হওয়া আরও তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা উদ্ধারেও অভিযান চলছে। আসামি গ্রেফতার ও ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার হলে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
মামলার বাদীর প্রত্যাশা, ছিনতাই হওয়া আরও তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা দ্রুত যেন উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি সব আসামি গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।
গত ১৪ আগস্ট এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে ওইদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেননি। এ জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মিরপুর জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মো. সাজু মিঞা জাগো নিউজকে বলেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী গাড়ি থেকে প্রায় সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় ১৩ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তদন্ত ও আসামিদের দেওয়া জবানবন্দির তথ্য মতে ঘটনার সঙ্গে আরও দুই থেকে তিনজন জড়িত। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে ছিনতাই হওয়া আরও তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা এখনো উদ্ধার হয়নি। ওই টাকা উদ্ধারের জন্যও অভিযান চলছে। পলাতক আসামি ও বাকি টাকা উদ্ধার হলে মামলার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
মামলার বাদী মানি প্ল্যান্টের পরিচালক (অপারেশন্স) আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মামলার পর ছিনতাই হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। আদালতের নির্দেশে আমরা এই টাকা বুঝে পেয়েছি। এখনো ছিনতাই হওয়া তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা আমরা পাইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিনতাই হওয়া তিন কোটি টাকা যেন উদ্ধার করে দেয়। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। অপরাধীরা যেন শাস্তি পায় সেই প্রত্যাশা আমাদের।
তুরাগ থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই নওশের আলী বলেন, রাজধানীর উত্তরায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতার ১৩ আসামি এখন কারাগারে।
গত ৯ মার্চ সকালে রাজধানীর উত্তরা থেকে বেসরকারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী গাড়ি থেকে প্রায় সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাই হয়। প্রকাশ্যে দিনের আলোতে রাস্তা থেকে নজিরবিহীন এ ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও টাকা উদ্ধারে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই উত্তরা এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া টাকাভর্তি ৪ বক্সের মধ্যে ৩ বক্স উদ্ধারের কথা জানায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসসহ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় সাতজনকে।
এ ঘটনায় মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসের বাদী হয়ে তুরাগ থানায় মামলা করেন। মামলার পর ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্ধার হওয়া টাকা মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে আদালতের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো উদ্ধার হয়নি ছিনতাই হওয়া আরও তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার আসামিরা আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা কারাগারে।
কারাগারে থাকা আসামিরা হলেন- সালোয়ার হাসান, ইমন হোসেন মিলন, মো. আকাশ মাতবর, মো. সাগর মাতবর, বদরুল আলম, মিজানুর রহমান, সনাই মিয়া, এনামুল হক বাদশা, মো. হৃদয়, আকাশ আহম্মেদ বাবলু, মিলন মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব ও সোহেল রানা শিশির।