পশ্চিমবঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সফিকুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে রোববার (২৭ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে দত্তপুকুর শহরের নীলগঞ্জ এলাকায় ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় এরই মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ মজুত করায় গাফিলতি, অনিচ্ছাকৃত খুন, অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু, এক্সপ্লোসিভ অ্যাক্ট ও ফায়ার অ্যাক্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া একাধিক ব্যক্তির দেহাবশেষ পড়ে রয়েছে। এমনকি, এ বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, ৫০০ মিটার দূরের কলা বাগানেও মানুষের দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিষ্কার করার সময় দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এই ভয়ানক বিস্ফোরণের ফলে এলাকাবাসী এখনো আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) দুই সদস্যের একটি দল। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন ও ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন।
সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী, জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম।
শুভেন্দু অধিকারীর সরাসরি অভিযোগ, এখানে আরডিএক্স নিয়ে কাজ করা হতো। এনআইয়ের তদন্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে।
বিস্ফোরণের ফলে বেশ কিছু বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ির ছাদে উঠে শুভেন্দু অধিকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কি এনআইএ’র তদন্ত চান? নিচে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন চিৎকার করে বলে ওঠে, হ্যাঁ আমরা এনআইএ’র তদন্ত চাই।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মো. সেলিম বিস্ফোরণ জন্য সরাসরি পুলিশকেই দায়ি করেন। তিনি বলেন, এটা মমতা ব্যানার্জির অপশাসনের হলমার্ক। যখনই কোনো ঘটনা ঘটে তখনই তৃণমূলের দুর্নীতি, চুরি, জোচ্চুরি প্রকাশ্যে চলে আসে। অন্যদিকে, মমতা সিপিএমের ওপর দোষ চাপান। কোনো কিছু ঘটলেই তৃণমূলকে আড়াল করতে আমাদের জিহাদি, টেরোরিস্ট বলা হয়।
জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, আমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি, এখানে বোমা তৈরির উপকরণ রয়েছে। এই বাঁশ বাগান একটা বোমার বাগান। এটা একটা সংগঠিত বোমা বানানোর কারখানা। বিস্ফোরণের যে ভয়াবহতা দেখছি, তাতে আমি নিশ্চিত যে সাধারণ বাজি বানাতে যা লাগে এটা তা নয়। এখানে আরডিএক্সও আছে, আরডিএক্স ছাড়া এ ধরনের বিস্ফোরণ সম্ভবই নয়।
অধীর রঞ্জন চৌধুরী মমতা ব্যানার্জির দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে বলেন, রাজ্যজুড়েই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এখনো চুপ। প্রশাসনের অগোচরে ও তৃণমূলের অজান্তে এ ধরনের কাজ হতে পারে না। এই বেআইনি বাজি কারখানার সঙ্গে প্রশাসন ও তৃণমূলের নেতারা জড়িত। এখানকার বোমা পশ্চিমবঙ্গের আরও অনেক জায়গায় সরবরাহ হয় ।