জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা কবে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চিতভাবে কিছু জানাল না। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চকে সলিসিটর জেনারেল (এসজি) তুষার মেহতা জানান, এই অঞ্চলকে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ করে তুলতে কেন্দ্র কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলেই রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তা কবে, সে কথা নির্দিষ্টভাবে এখনই বলা যাচ্ছে না।
সলিসিটর জেনারেল একই সঙ্গে বলেন, জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচন করতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তুত। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ প্রায় শেষের দিকে। কবে সেখানে ভোট করানো যাবে, তা নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরীয় নির্বাচন কমিশনের ওপর।
তুষার মেহতা বলেন, পঞ্চায়েত, পৌরসভা ও বিধানসভা—তিন পর্যায়েরই ভোট করানো হবে। আজ বৃহস্পতিবারেও তিনি মনে করিয়ে দেন, জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়েছে সাময়িকভাবে। রাজ্যকে শান্তিপূর্ণ ও সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে যা যা করা দরকার, তা শেষ হলেই রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল না থাকলে কেন্দ্র যা যা করতে চাইছে, তা করা যাবে না।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজ করার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যেসব মামলা হয়েছে, সাংবিধানিক বেঞ্চে তার দৈনন্দিন শুনানি চলছে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় ছাড়াও ওই বেঞ্চে রয়েছেন সঞ্জীব কিষান কল, সঞ্জীব খান্না, বি আর গাভাই ও সূর্য কান্ত। গত মঙ্গলবার শুনানির সময় বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাতে বলেছিলেন, কবে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তা নির্দিষ্ট করে জানাতে।
সলিসিটর জেনারেল সেদিন বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলে আজ তা জানাবেন। কিন্তু সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি তিনি দিলেন না।
তুষার মেহতা বলেন, সরকার বারবার বলেছে পরিস্থিতির উন্নতি হলেই জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তবে লাদাখ তার অন্তর্গত হবে না। ওই অঞ্চল কেন্দ্রশাসিতই থাকবে। তিনি বলেন, রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার আগে জম্মু-কাশ্মীরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা জরুরি। সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।
সলিসিটর জেনারেল বলেন, একটা সময় বন্ধ্ ও হরতালে জনজীবন বিপর্যস্ত হতো। ইট ছোড়া ছিল নিত্য বিষয়। ২০১৮ সালে নিরাপত্তারক্ষীদের তাক করে ১ হাজার ৭৬১টি ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল। আজ তেমন ঘটনা একটিও হয় না। ২০১৮ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ডাকা বন্ধ্–এর সংখ্যা ছিল ৫২। আজ কোনো বন্ধ্ হয় না। তাই ২০২২ সালে ১ কোটি ৮০ লাখ পর্যটক সেখানে গেছেন। এই বছর গেছেন ১ কোটি। অবস্থা ফিরছে। পুরোপুরি স্বাভাবিক হলেই জম্মু-কাশ্মীর আবার রাজ্য হবে।
জম্মু-কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে তুষার মেহতা এজলাসে যা যা বলেন, আবেদনকারীদের আইনজীবী কপিল সিবাল তাঁর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এটা কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। পাঁচ হাজার মানুষকে গৃহবন্দী করে রাখলে ও সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারি থাকলে বন্ধ্–এর ডাক দেওয়াই যায় না।
কপিল সিবাল বলেন, পাঁচ হাজার মানুষকে গৃহবন্দী রেখে, ১৪৪ ধারা বলবত করে ও ইন্টারনেট-ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে সরকার গণতন্ত্রের বড়াই করছে, সেটা নিছকই পরিহাস।