ভারতের কাছে ২২৮ এতবড় হার, যেটা আবার রানের হিসেবে ভারতের কাছে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় হারের রেকর্ড- এমন একটি পরাজয়ের পর পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা, বিশেষ করে ঠোককাটা হিসেবে পরিচিত শোয়েব আখতার কিভাবে নিজের দেশের দলকে ধুয়ে দেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিল সবাই।
কিন্তু না, যেভাবে ভাবা হয়েছিলো, সেভাবে ধুয়ে দেননি। হয়তো, ভারতের কাছে ধুয়ে-মুছে যাওয়ার পর বাবর আজমদের ক্ষতটা আর বাড়াতে চাননি শোয়েব। সে কারণে, নরমে-গরমে মিশিয়ে সমালোচনা করেছেন।
যদিও, ভারতের ৩৫৬ রানের জবাবে ১২৮ রানে অলআউট হয়ে ২২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজয়কে ‘অপমানজনক’ হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন শোয়েব আখতার। কিন্তু তার কাছে এই একটি হারে পাকিস্তান খারাপ দল হয়ে যায়নি বা বাতিল দল হয়ে যায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রোববার শুরু হয়েছিলো ম্যাচ। শেষ হলো সোমবার। বৃষ্টির কারণে রিজার্ভ ডে’তে ম্যাচ গড়ায়। তবে ম্যাচের গতি-প্রকৃতি দেখেই হয়তো শোয়েব আখতার বৃষ্টি কামনা করেছিলেন। ম্যাচে যখন বারবার বৃষ্টি হানা দিচ্ছিলো, তখন শোয়েব আখতার টুইটে একটি হিন্দি গানের কলি লিখেন এভাবে, ‘বারসোরে মেঘা মেঘা’। অর্থ্যাৎ, বৃষ্টিকে আহ্বান জানাচ্ছিলেন তিনি।
ম্যাচ শেষে শোচনীয় পরাজয়ের পর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে শোয়েব স্বীকার করেন, বৃষ্টিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছিলাম। ভাবছিলাম যে বৃষ্টি হয়ে যাক। জীবনটা বাঁচুক। তবে এভাবে আসলে হয় না। পাকিস্তান বেশ অপমানজনকভাবে হেরেছে। পাকিস্তান ১২৮ রানে অলআউট হয়েছে। এটা খুবই আশঙ্কাজনক ব্যাপার। এত ভালো ব্যাটিং উইকেটে পাকিস্তান টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত কেন নিল? আর এত ভালো দল ভারতকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ কেন দিল? এই সিদ্ধান্ত আমার কাছে একটু অদ্ভুতই ঠেকেছে। এর ফলও এখন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।’
তবে, এই এক হারে বাবর আজমের দলকে একেবারে বাতিলের খাতায়ও ফেলে দিতে রাজি নন তিনি। শোয়েব আখতার বলেন, ‘এক ম্যাচ দিয়েই পাকিস্তানকে বাতিল করা যাবে না। যেমন এক ম্যাচ দিয়ে ভারতকেও বাতিল করার সুযোগ নেই।’
ভারতকে শুভেচ্ছ জানাতেও দ্বিধা করেননি শোয়েব। তাদের ব্যাটিং-বোলিংয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। এই জয় তাদের খুব ভালোভাবেই প্রাপ্য ছিল। তারা দুর্দান্ত খেলেছে। তারা ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই খুব অসাধারণ করেছে। ভারতীয় বোলিং লাইন এই বার্তা দিয়েছে যে তারা পুরোপুরি আগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে খেলবে এবং উইকেট নেবে। আর আমরা দ্রুত আউট করব। তারা সেটা করেও দেখিয়েছে। একজন পেসার হিসেবে এটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। বুমরা খুবই ভালো স্পেল করছে। সিরাজও খুব ভালো করেছে।’
কেন এভাবে হারতে হলো পাকিস্তানকে? এর কিছু কারণ দাঁড় করিয়েছেন শোয়েব। তিনি বলেন, ‘হারিস রউফের চোট আমাকে বেশ ভাবনায় ফেলেছে। দ্বিতীয় স্পেল সে করতে পারেনি। তবে এই ছেলেগুলোর দোষও নেই। সাফাই গাইছি না। যদি হিসাব করেন, তারা একসঙ্গে কতগুলো ওয়ানডে খেলেছে? পুরো বছরে ১৩, ১৪ বা ১৫ ওয়ানডে হয়তো তারা খেলেছে। পেছনে ফিরে গেলে ওয়াসিম-ওয়াকার ভাই তো এক মৌসুমেই ৫০০ থেকে ৬০০ ওভার করতেন। ১০ ওভার করার জন্য সেই প্রাণশক্তিও এখন আর নেই। দ্বিতীয় স্পেল করার জোর থাকতে হয়। আমার মনে হয়, সে জায়গায় ঘাটতি আছে। আর তারা প্রচুর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে। আমি সব সময় বলি, ৪ ওভারের বোলার নয়, ১০ ওভারের বোলার হতে হবে। ১০ ওভারের ক্রিকেটের সৌন্দর্যটা এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। অবশ্য এই খেলা হয়ও কম। ছেলেদের ওপর রাগ করেও লাভ নেই।’
সেঞ্চুরি করা ব্যাটার বিরাট কোহলির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন শোয়েব। তার কাছ থেকে অন্যদের শেখার আহ্বানও জানান তিনি। শোয়েব বলেন, ‘ভারতকে টুপিখোলা অভিবাদন। কোহলি দারুণ প্রত্যাবর্তন করেছে। সে অসাধারণ একজন ক্রিকেটার! এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। লোকেশ রাহুলও সেঞ্চুরি করেছে। ছেলেদের শেখা উচিত যে বিরাট কোহলি যখন রান করে, তখন সে লম্বা ইনিংস খেলে। ওভার আরও বাকি থাকলে সে আরও লম্বা ইনিংস খেলত। ১৫০ পার করে ফেলত। ভারতের এই সামর্থ্য আছে, যেকোনো জায়গায় এসে রান করতে পারে। শাবাশ কুলদীপ। কুলদীপকে তো কখনো বাদ দেওয়াই উচিত নয়। আমি এখনো বুঝতে পারিনি, চাহাল ও কুলদীপকে কেন বাইরে রাখে। আজ কুলদীপ বুঝিয়ে দিয়েছে, কেন সে ভালো।’
বাবর আজমদের শোচনীয় পরাজয়ের পরও ফাইনালে পাকিস্তানকেই ভারতের বিপক্ষে দেখতে চান তিনি। শোয়েব বলেন, ‘এখন দুই দলকে ফাইনালে যেতে হবে। ফাইনালে দুই দলের মানসিকতা ও স্নায়ুর পরীক্ষা হবে। তবে ভারতকে আবারও অভিনন্দন জানাচ্ছি। পাকিস্তানকে দারুণ শিক্ষা দিল তারা। এখন তাদের শক্তিশালীভাবে ফিরে আসতে হবে। আমি মনে করি, তারা সেটা পারবে। আমার মনে হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় উন্নতি দেখাতে হবে। ফাস্ট বোলিংয়ে পরিবর্তন হোক বা টস জিতে ব্যাটিং করবে, নাকি ফিল্ডিং- এসব বিষয়ে আরও বিচক্ষণ হতে হবে। দলীয়ভাবেই এই বিচক্ষণতা দেখাতে হবে।’