লালমনিরহাটের পাটগ্রামে দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ৭০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঠদান করাচ্ছেন মাত্র পাঁচজন শিক্ষক। ইংরেজিসহ আট বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। ফলে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক ও দুজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী উপস্থিত। এক ভাড়াতে শিক্ষক স্কুলমাঠে নবম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন। মাঠের পূর্ব দিকেই রয়েছে সুসজ্জিত ছয়তলা ভবন। নির্মাণকাজ কাজ শেষ হলেও এখনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্কুল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়নি ভবনটি। এতে ক্লাসরুম সংকটে স্কুলমাঠে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা।
২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রাম সফরের মধ্যদিয়ে তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত ঘোষণা ও এ ভূখণ্ডের একমাত্র দহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের ঘোষণা দেন। এরপর ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। এরপর থেকে নির্ধারিত শর্ত পূরণ না হযওয়ায় অনেক শিক্ষক বাদ পড়ে যান। সরকারিকরণের পর বিদ্যালয়ে ২৭ জন শিক্ষকের পদ থাকার কথা। কিন্তু ২২ জন শিক্ষকের পদ ১০ বছরও সৃষ্টি হয়নি। মাত্র পাঁচ শিক্ষক নিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে সাতজন থাকার কথা থাকলেও সেখানে মাত্র দুজন কর্মরত। অথচ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এমনকি বিজ্ঞান ও বাণিজ্যিক বিভাগে কোনো শিক্ষক না থাকায় বিভাগ দুটিতে শিক্ষার্থীরা পড়তে পারছে না। এতে পড়ালেখার মান নিয়ে হতাশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।
বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আরিফ হোসেন বলে, ‘প্রতিদিন স্কুলে আসি কিন্তু পুরো ক্লাস হয় না। মাত্র ৩-৪টি ক্লাস হয়। অনেক সময় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আমরা শিক্ষক পাই না।’
নবম শ্রেণির ছাত্র আশা মনি বলে, ‘ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করবো কিন্তু স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে কোনো শিক্ষক নেই। তাই মানবিক বিভাগ পড়াশোনা করছি। ভবিষ্যতে ভালো কলেজে চান্স পাবো কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
স্থানীয় মাইদুল ইসলাম বলেন, সরকারিকরণের পর থেকে শিক্ষক সংকটে ভুগছে বিদ্যালয়টি। দিন দিন শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। ক্লাসের শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করছে। এ বিষয়ে আমরা দ্রুত সমাধান চাই।
দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ফরিদ। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের পর থেকে অনেক কষ্ট করে পরিচালনা করে আসছি। বেশিরভাগ সময় ভাড়াটে শিক্ষক দিয়ে চালাচ্ছি।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি স্থানীয় এমপিকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র রায় বলেন, গতমাসে শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে শিক্ষক সংকটের বিষয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি, খুব শিগগির শিক্ষক সংকটের সমাধান হবে।
জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী বলেন, গত জুলাইয়ে শিক্ষাসচিব বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে আসেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি তিনি নোট করেন। শিক্ষক বাড়ানো হবে বলে আশ্বাস দেন। আশা করি, দ্রুততম সময়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষক সংকট দূর হবে।