সকাল ৯টা। উত্তরা থেকে যাত্রী নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটছে হাজারো যানবাহন। এ যানবাহনের চাপে বনানী-মহাখালী অংশে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। অথচ এ সড়কের ওপরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে একদম ফাঁকা। সেখানে কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি উঠছে না।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে এ চিত্র। যাত্রীদের অভিযোগ, যে উদ্দেশ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তার সুফল মিলছে না। আগের মতোই বিমানবন্দর সড়ক, বনানী, মহাখালীতে যানজট হচ্ছে।
সুফল না মেলার জন্য যাত্রীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার সব র্যাম্প চালু না হওয়া, গণপরিবহন না ওঠাকে দায়ী করছেন। এরমধ্যে নিষেধাজ্ঞার কারণে সিএনজি ও মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় নগরের যানজট নিরসনে এক্সপ্রেসওয়ে তেমন সুফল বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন অনেকে।
বুধবার সকালে দেখা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পূর্বপাশে এক্সপ্রেসওয়ের একটি র্যাম্প দিয়ে যানবাহন নামছে, আরেকটি দিয়ে উঠছে। এরমধ্যে ফার্মগেট বা বনানীর দিক থেকে আসা লেনে মিনিটে পাঁচ-থেকে সাতটি ব্যক্তিগত গাড়ি নামতে দেখা যায়। নিচে উত্তরাগামী সড়কেও যান চলাচল স্বাভাবিক। কিন্তু বিপরীত পাশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার লেনে মিনিটে ১৫-১৬টি ব্যক্তিগত গাড়ি উঠছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার পথে টোলের বড় একটা বোর্ড টানানো। সেখানে লেখা রয়েছে, গাড়ি, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) ও হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) জন্য টোল (ভ্যাটসহ) ৮০ টাকা। মাঝারি ট্রাকের জন্য (৬ চাকা পর্যন্ত) ৩২০ টাকা। ৬ চাকার বেশি ট্রাকের জন্য ৪০০ টাকা। আর সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) জন্য টোল ১৬০ টাকা। কিন্তু এ পরিমাণ টোল দিয়ে কোনো গণপরিবহন এক্সপ্রেসওয়েত ওঠতে দেখে যায়নি। মোটরসাইকেল ও সিএনজি উঠতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিচ্ছেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় গাড়ি নিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠেন এই প্রতিবেদক। এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতেই টোলপ্লাজা। তবে এখানে যানবাহনের কোনো চাপ নেই। ৮০ টাকা টোল দিয়ে সামনে এগুতেই দেখা যায় এক্সপ্রেসওয়ের দুপাশের লেন ফাঁকা। কিছুক্ষণ পরপর দু-চারটি গাড়ি যেতে দেখা গেছে। এরমধ্যে কুড়িল, বনানী অংশ থেকে ফার্মগেটমুখী ব্যক্তিগত গাড়ি উঠতে দেখা যায়। এভাবে ৬০ কিলোমিটার গতিতে ১০ মিনিটের মধ্যে ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টের সামনের র্যাম্প দিয়ে নামে এই প্রতিবেদকের গাড়ি। নামার পথে কোনো জটলা ছিল না।
সকাল ১০টায় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কাওলা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ফার্মগেটে নামেন বেসরকারি চাকরিজীবী হায়দার আলী। হাতে ইশারা দিয়ে তার গাড়ি থামিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের সুবিধা নিয়ে মন্তব্য চাওয়া হয়।
এসময় হায়দার আলী জানান, তার বাসা উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টরে, অফিস ধানমন্ডি-২৭ নম্বরে। আগে এ পথে যাতায়াতে গড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে সব মিলিয়ে ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই উত্তরা থেকে অফিস যেতে পারেন।
তবে এত বড় একটা প্রকল্প চালু হওয়ার পরও নিচে সড়কে যানজট কমেনি। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে বলে জানান হায়দার আলী।
জানতে চাইলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এএইচএমএস আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাতায়াত করে। এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়বে।
তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে গণপরিবহন পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) পরিকল্পনা দিচ্ছে। তারা বাস চালু করলে অনেকেই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবেন। তবে যেখানে-সেখানে ওঠানামার জায়গা না থাকায় এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে তেমন সুবিধা নেই ঢাকার গণপরিবহন। কারণ, একবার কাওলা থেকে যাত্রী নিয়ে উঠলে তাকে সরাসরি ফার্মগেট গিয়ে নামতে হবে।
এর আগে ২ সেপ্টেম্বর কাওলা অংশে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সবার জন্য খুলে দেওয়া হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
এর দূরত্বের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং র্যাম্পসহ ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এই অংশে মোট ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে ১৩টি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। কিন্তু মহাখালী ও বনানী অংশ থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার র্যাম্প চালু হয়নি। এ দুটি র্যাম্পের নির্মাণকাজ চলছে এখনো।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিক এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি শাহজালাল বিমানবন্দরের পূর্বে কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ-খিলগাঁও-কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। এক্সপ্রেসওয়ের মূল দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার, র্যাম্পসহ দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
প্রকল্পের মোট ব্যয় আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। যার ২৭ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার ভিজিএফ হিসেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আগামী বছরের জুন মাসে এক্সপ্রেসওয়ের পুরোপুরি কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।