মানসিক ভারসাম্যহীন নারী মাহিনুরের যমজ দুই সন্তানকে হাসপাতালে রেখে চলে গেছেন আনসার সদস্যরা। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে দুই নারী আনসার সদস্য নবজাতকদের নার্সের কাছে রেখে চলে যান। মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও যমজ সন্তানদের নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রতায় অধস্তনরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। যদিও জেলা প্রশাসক দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের নতুন গ্রামের জামিরুল ইসলামের বিছালির (খড়) ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী যমজ সন্তান প্রসব করেন। পরে গৃহকর্তা জামিরুল ওই নারীকে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর থেকে মা ও দুই নবজাতক যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালে ভর্তির সময় ওই নারীর পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও পরবর্তীতে পিবিআই ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। জানা যায়, ওই নারীর নাম মোসাম্মৎ মাহিনুর। তিনি খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামের চান্দু মিয়ার মেয়ে। পিবিআইে মাহিনুরের মা ও ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা মাহিনুর ও তার সন্তানদের নিতে রাজী হয়নি। এই অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় হাসপাতালের সমাজসেবা অফিস, জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রসূতি মা ও দুই নবজাতকের তত্ত্বাবধান করছিল। আর সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য দুজন করে নারী আনসার সদস্য নিয়োজিত ছিলেন।
বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষ করে আনসার সদস্য সাহারা খাতুন ও রাখী আক্তার শিশু দু’টিকে নার্সদের হাতে তুলে দিয়ে চলে যান। এরপর আর কোনো আনসার সদস্য সেখানে যাননি। এ ঘটনার পর রাতের হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান। পাশাপাশি শিশু দুটির নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে আনসার সদস্য সাহারা খাতুন বলেন, দশ-বারো দিন ধরে ওই নারীর মার খেয়ে বাচ্চাদের দেখাশোনা করছি। কিন্তু কতদিন এ দায়িত্ব পালন করতে হবে; তা কেউ বলছেন না। আবার দুধ-প্যাম্পাসের হিসাব নিয়ে বকা ঝকা করা হচ্ছে। এ জন্য বুধবার রাতে আমার দায়িত্ব শেষ করে নার্সদের কাছে বাচ্চা দিয়ে চলে এসেছি। এরপর যাদের দায়িত্ব ছিল তারা কেউ যায়নি।
এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য সদর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা অনন্ত কুমার ঘোষকে ফোন দেওয়া হলে তিনি কল কেটে দেন।
জেলা কমান্ড্যান্ট সঞ্জয় কুমার সাহা জানান, হাসপাতালে মা ও সন্তানদের দেখাশোনার জন্য আনসার সদস্য নিয়োগের ব্যাপারে তিনি অবগত নন।
এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপ দাশ বলেন, আনসার সদস্যরা না আসার ব্যাপারে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে জেলা প্রশাসক মহোদয় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, রাতে আনসার সদস্যরা শিশু দুটিকে নার্সদের হাতে দিয়ে চলে যাওয়ার পর তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন।
যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, আনসার সদস্যদের চলে যাওয়ার বিষয়টি রাতেই শুনেছি। মা ও সন্তানরা সুস্থ রয়েছেন। এ অবস্থায় তাদের হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর প্রয়োজন। কিন্তু এ মা ও তার সন্তানদের ব্যাপারে পদক্ষেপের জন্য কিছু আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। এ অঞ্চলে বাগেরহাটে সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি সেইফ হোম আছে। আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে সেখানে স্থানান্তর করতে।