সোমবার , ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

ডেঙ্গুতে মারা গেলো বড় বোন, ছোট বোন ভর্তি হলো সেই খালি বেডে

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩ ১:২১ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সিনিয়র স্টাফ নার্স রাহেনা খাতুন। এর আগে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন রাজধানীর হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। মানুষের সেবা করে সুস্থ করে তোলাই তার কাজ। স্বামী আলমগীর হোসেন একজন ঠিকাদার। তাদের ঘর আলো করে রাখতো দুই মেয়ে আট বছর বয়সী আফিয়া আঞ্জুম ও ছয় বছর বয়সী তাসনিয়া তাসনিম। তাদের সেই আলোকিত ঘরে অসময়ে যেন নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। ডেঙ্গু কেড়ে নিয়েছে তাদের বড় মেয়েকে। ছোট মেয়ে সেই একই বেডে চিকিৎসাধীন। ঘরে ফেরার মানসিক শক্তিটুকুও যেন হারিয়েছেন এ দম্পতি।

চারজনের পরিবার নিয়ে রাজধানীর ৬০ ফুটের বারিক মোল্লার মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালি থানায়। গত ৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ জ্বর আসে বড় মেয়ে আফিয়ার। অনেক বেশি ঠান্ডা ও দুর্বলতা দেখা দেয়। একদিন পরেই নেওয়া হয় বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে। প্রথমে হাসপাতালের বেডে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। একদিন পর একই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তার ছোট বোন তাসনিয়া তাসনিমকেও। অন্যদিকে শক সিন্ড্রোমে চলে যায় আফিয়া। কমে যায় রক্তচাপ। হাসপাতাল থেকে বলা হয় শিশুদের বিশেষ কেয়ার ইউনিট পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআসিইউ) নিতে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে দিতে গলা ধরে আসছিল আফিয়া-তাসনিয়ার বাবা মো. আলমগীর হোসেনের। বলছিলেন, বড় মেয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে চিকিৎসক পিআইসিইউর কথা বলেন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করতে থাকলেও কোথাও পিআইসিইউ পাচ্ছিলাম না। একপর্যায়ে এক লোকের মাধ্যমে জানতে পারি ঢাকা হেলথ কেয়ার নামে একটি হাসপাতালে পিআইসিইউ আছে। বড় মেয়েকে সেখানে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তবে এই হাসপাতালের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি।

দুই মেয়ে দুই হাসপাতালে, দিশেহারা বাবা-মা

বাবা-মা দুজনই একবার ঢাকা হেলথ কেয়ার একবার শিশু হাসপাতালে দুই মেয়ের দেখাশোনায় দৌড়াচ্ছিলেন। এর মধ্যে চেষ্টা করতে থাকেন শিশু হাসপাতালের পিআইসিইউর জন্য। অনেক রিকোয়েস্ট ও চেষ্টায় শিশু হাসপাতালে পিআইসিইউ ম্যানেজ হয়। আফিয়ার জায়গা হয় পাঁচ নম্বর বেডে। এর আগে বেসরকারি ওই হাসপাতালে একদিনেই ৫০ হাজার টাকা বিল দিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর বড় মেয়েকে আনেন শিশু হাসপাতালে। তবে দিন দিন অবনতি হতে থাকে তার শারীরিক অবস্থার।

চিকিৎসকরা এক পর্যায়ে নরমগ্লোবিন নামে ইনজেকশনের ব্যবস্থা করতে বলেন। তবে অনেক খুঁজেও প্রয়োজনীয় আটটি ইনজেকশন পাওয়া যায়নি। পরে চিকিৎসকরা নিষেধ করে দেন আর খুঁজতে এবং মেয়েকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টায় আফিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

‘এক মেয়েকে হারিয়েছি, সেই বেডেই ছোট মেয়েকে রাখার ব্যবস্থা করে দিন’

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, পিআইসিইউর বাইরে একটি বেঞ্চে মাথা রেখে চোখ বুজে শুয়ে আছেন রাহেনা খাতুন। বড় মেয়ের শোকে পাগলপ্রায় তিনি। ঠিকমতো পারছিলেন না কথা বলতে। ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন।

পাশে থাকা আফিয়া-তাসনিয়ার বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, ছোট মেয়ে ভর্তি ছিল হাসপাতালের ওয়ার্ডে। তারও শরীরে প্লাটিলেট কম ছিল। হাসপাতালে বলেছি এক মেয়েকে হারিয়েছি, সেই বেডেই আমার ছোট মেয়েকে রাখার ব্যবস্থা করে দিন। এরপর থেকে বড় মেয়ের সেই পিআইসিইউ বেডেই চিকিৎসা নিচ্ছে তাসনিয়া। তার শারীরিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। প্লাটিলেট বাড়ছে। চিকিৎসকরা আশা দিয়েছেন। তবে এখনো স্পষ্ট জানাননি। কাল জানাবেন।

‘বড় মেয়ে আফিয়া আঞ্জুম রাজধানীর কুমারা প্রিপারেটোরি স্কুলে কেজি টুতে পড়তো। মেধাবী ছিল সে। স্কুলের প্রথম স্থান অর্জন করেছে সব সময়। হাতের লেখা ছিল অসাধারণ। এজন্য স্কুলের শিক্ষকরা তাকে বোর্ডে লিখতে দিতেন। আমার এই মেয়েটাকে আল্লাহ নিয়ে গেলো।’ একথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ছোট মেয়ে পড়াশোনা করে আলহেরা মডেল মাদরাসায়।

ঘরে ফেরার মানসিক শক্তি নেই

আলমগীর বলছিলেন, ঘরে যাওয়ার মতো মানসিক শক্তি নেই। মেয়েরা যে কী প্রিয় তা বলে শেষ করে যাবে না। আমি ঘরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে এসে জাপটে ধরতো। শুক্রবার ওদের ছাড়া নড়তেই পারতাম না। এদিন একসঙ্গে গোসল করতাম। মেয়েরা জুমার নামাজ পড়ে বাকি নামাজ তাদের সঙ্গে পড়তে বলতো। তাই জুমা পড়ে বাসায় এসে তাদের সঙ্গে বাকি নামাজ পড়তাম। কীভাবে ওখানে যাই। ওখানে গেলেতো সহ্যই করতে পারবো না।

পিআইসিইউতে দায়িত্বরত শিশু হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ মশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনা খুবই কষ্টদায়ক। পিআইসিইউতে বেশিরভাগই ডেঙ্গুরোগী ভর্তি। সিট খালি না থাকায় আফিয়াকে এখানে ভর্তি করানো যায়নি। পরে বাইরে পিআইসিইউতে রেখেছিল। পরে এখানে সিট খালি হলে তাকে আবার এখানে নিয়ে আসা হয়। তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। পরে তাদের আরেক মেয়েকে একই সিটে ভর্তি করানো হয়েছে।

সর্বশেষ - আইন-আদালত