শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর জেরা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরমধ্যে তিনদিন জেরা হয়েছে। আজ চতুর্থ দিনের মতো জেরার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালতে জেরা হওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
মামলায় অন্য বিবাদীরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান।
আদালতে এদিন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী থাকছেন। আর ড. ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন ও ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ থাকবেন।
এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দিনের মতো প্রথম সাক্ষীর জেরা হয়। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা জেরা গ্রহণ করেন। এরপর মামলার শুনানি ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এটি শুনানি ও জেরা হওয়ার কথা রয়েছে।
ওইদিন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলায় পরিদর্শন চেকলিস্ট জালিয়াতির অভিযোগের পর এবার মিথ্যা সাক্ষী প্রস্তুত করতে নোটিশ জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া আদালতে সহযোগিতা না পাওয়ারও অভিযোগ করেন আইনজীবী। গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) জেরার সময় ড. ইউনূসের আইনজীবী এ অভিযোগ করেন। এসময় তিনি আদালতে বলেন, ড. ইউনূসসহ চারজনকে তড়িঘড়ি করে হয়রানি ও অপমান করার উদ্দেশ্যে এ মামলা করা হয়েছে।
সাক্ষ্যগ্রহণের শুরুতে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন মামলার বাদী তরিকুল ইসলামকে জেরা করেন। জেরার সময় আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুন সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, নোটিশ লেখার নিয়ম অনুযায়ী নোটিশের শেষে সই করেন। জবাবে সাক্ষী সঠিক বলেন। এরপর তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট গ্রামীণ টেলিকমকে পাঠানো নোটিশে মামলার বাদীসহ মোট পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে চারজনের সই দেওয়া আছে। এই নোটিশে টেম্পারিং বা জালিয়াতি করে এই নাম যুক্ত করেছেন। জবাবে সাক্ষী বলেন এটা সত্য নয়।
এরপর আইনজীবী বলেন, ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দাঁড় করাতে জালিয়াতি করে এ চারজনের নাম ও সই জব্দ তালিকা-৫ হিসেবে দাখিল করেছেন। জবাবে সাক্ষী বলেন এটাও সত্য নয়।
এরপর আইনজীবী আবারও জেরায় বলেন, ড. ইউনূসসহ চারজনকে তড়িঘড়ি করে হয়রানি ও অপমান করার উদ্দেশ্যে এ মামলা করেছেন। জবাবে সাক্ষী বলেন এটাও সত্য নয়।
এর আগে ২২ আগস্ট এ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করার পর তাকে জেরা করেন ড. ইউনূসের আইনজীবীরা। এরপর ৫ ও ১৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষীকে জেরা করেন ড. ইউনুসের আইনজীবী। তারই ধারাবাহিকতায় ওইদিন জেরা অনুষ্ঠিত হয়।
৬ জুন মামলার চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মধ্যদিয়ে বিচার শুরু হয়। কিন্তু এ মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূস হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। হাইকোর্ট সে আবেদন খারিজ করার পর তার বিরুদ্ধে আপিল করেন আইনজীবীরা। আপিলেও হাইকোর্টের সেই খারিজ আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরে নিয়ম অনুযায়ী বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালতে ২২ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেছিলেন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে পারেন। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।
এদিকে ৩০ মে ড. ইউনূসকে প্রধান আসামি করে আরও ১২ জনের নামে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন।