যদি আপনি বেড়াতে পছন্দ করেন তাহলে স্টিফেন ফেনেচের গল্পগুলো আপনার জন্য। কানাডার নাগরিক স্টিফেন এমন একজন ব্যক্তি, তাঁর বেড়ানোর গল্প শুনে যে কারও হিংসা হবে। একটি, দুটি কিংবা ১০, ২০টি দেশে নয়, স্টিফেন ঘুরেছেন বিশ্বের সব কটি দেশে। শুনে অবাক হচ্ছেন? ভ্রমণপ্রিয় স্টিফেন এই অভিজ্ঞতা অর্জনে জীবনের ৩৬ বছর ব্যয় করেছেন।
বরফাচ্ছাদিত অ্যান্টার্কটিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের শুষ্ক মরুভূমি, ইউরোপের পর্বতমালা থেকে আফ্রিকার জঙ্গল—সবখানে পা পড়েছে স্টিফেনের। কতশত অভিজ্ঞতা জমেছে তাঁর ঝুলিতে। ঘুরে এসেছেন উত্তর কোরিয়া। শ্রীলঙ্কায় গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। জাপানের মাউন্ট ফুজি থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। এসব তাঁর চলার পথে বাধা হতে পারেনি। দারুণ উদ্যমে বিশ্বের সব কটি দেশ ভ্রমণের লক্ষ্য অর্জন করেছেন স্টিফেন।
স্টিফেনের ঝটপট জবাব, আমার প্রিয় দেশ ভুটান। সেখানকার শান্তিপূর্ণ নির্মল পরিবেশ ও সুখী মানুষ আমাকে ভীষণ টানে। আর শহরের কথা বলতে গেলে, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন খুবই ভালো লাগে। তবে জীবনের সেরা ভ্রমণ যদি বলি, সেটা অ্যান্টার্কটিকায়। সেখানকার বরফাচ্ছাদিত পরিবেশ, ঝাঁকে ঝাঁকে সিল—এককথায় অসাধারণ।
স্টিফেন একজন ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্র সাংবাদিক। সেই সঙ্গে চলচ্চিত্র বানান তিনি। একটি শপিং চ্যানেলে পূর্ণকালীন চাকরিও করছেন। মধ্য আফ্রিকার আদিবাসীদের নিয়ে তাঁর বানানো তথ্যচিত্র আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। অস্কারে মনোনয়ন এনে দিয়েছে। এসবের বাইরে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন স্টিফেন। এই শখ বিশ্বজয়ের পথে তাঁকে এগিয়ে নিয়েছে।
ভ্রমণের জন্য সঞ্চয় করবেন কীভাবে
তখন স্টিফেনের বয়স মাত্র ১৭ বছর। হাইস্কুলে পড়তেন। বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে একটি কোর্স ছিল তাঁর। এ জন্য বিশ্ব নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতে হতো। দেখতেন অনেক অনেক তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র। এভাবেই স্টিফেনের মনে বিভিন্ন সংস্কৃতির ভিন্নতা, জাতিগত বৈচিত্র্য নিয়ে আগ্রহ জন্মায়। এই আগ্রহ তাঁকে বিশ্ব ঘুরে দেখতে উৎসাহিত করেছিল বলে জানান স্টিফেন।
স্কুলজীবন শেষে পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে প্রথমবারের মতো বেড়িয়ে পড়েন স্টিফেন। যান ডমিনিকান রিপাবলিকে। এটাই তাঁর প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। স্টিফেন বলেন, ‘ওই ভ্রমণে আমি মাত্র তিনটি স্প্যানিশ শব্দ জানতাম। এটা বাধা হতে পারেনি।’ সেই থেকে শুরু। এরপর একে একে বিভিন্ন দেশে ঘুরতে শুরু করেন তিনি।
৬৪ জেলা ঘুরেছেন সাফাত-শিখা দম্পতি, ছবিতে দেখুন সেই গল্প
চলতি বছরের ২৭ মার্চ বিশ্বের সব কটি দেশ ঘুরে দেখার মাইলফলক ছুঁয়েছেন স্টিফেন। তাঁর সর্বশেষ ভ্রমণ করা দেশ ছিল পূর্ব তিমুর। এর আগে তিনি নাউরু ও পালাউ ঘুরে দেখেন। স্টিফেন আরও বলেন, বিশ্বের সব কটি দেশ ঘুরে দেখতে তাঁর ৩৬ বছর সময় লেগেছে। এ সময়ের মধ্যে তাঁর টানা তিন বছরের বেশি ঘরে না ফেরার রেকর্ড রয়েছে।
বিশ্বভ্রমণের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখছেন স্টিফেন। আর একটি স্বপ্ন মনের কোণে পুষে রেখেছেন। সেটা হলো— মহাকাশে ভ্রমণে যাওয়া। স্টিফেনের মতে, এ অভিজ্ঞতা তাঁর লেখা বইকে পূর্ণাঙ্গ করবে। বাইরে থেকে পৃথিবীটা দেখতে কেমন, সেটাও উপলব্ধি করতে পারবেন তিনি।
বিশ্বের কোন দেশ বা জায়গা আপনার সবচেয়ে ভালো লেগেছে? এ প্রশ্নের জবাবে স্টিফেনের ঝটপট জবাব, আমার প্রিয় দেশ ভুটান। সেখানকার শান্তিপূর্ণ নির্মল পরিবেশ ও সুখী মানুষ আমাকে ভীষণ টানে। আর শহরের কথা বলতে গেলে, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন খুবই ভালো লাগে। তবে জীবনের সেরা ভ্রমণ যদি বলি, সেটা অ্যান্টার্কটিকায়। সেখানকার বরফাচ্ছাদিত পরিবেশ, ঝাঁকে ঝাঁকে সিল—এককথায় অসাধারণ।
ঘুরতে গিয়ে কম বিপদে পড়তে হয়নি স্টিফেনকে। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আফ্রিকার দেশ নিরক্ষীয় গিনিতে বেড়ানোর সময় দেশটিতে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে রক্তপাত ঘটতে দেখেছেন। এ ছাড়া আফ্রিকায় জাতিগত সংঘাত প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে তাঁকে গহিন জঙ্গলে ট্রেকিং করতে হয়েছে।
জেলায় জেলায় ঘুরে প্রাণী ও পাখির ছবি তোলেন ঠাকুরগাঁওয়ের রেজাউল হাফিজ, দেখুন ১৫টি ছবি
একবার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে জাপানের মাউন্ট ফুজিতে গিয়েছিলেন। সেখানে ট্রেকিং করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তবে স্টিফেন ও তাঁর ভাই যখন যান, সেটা ট্রেকিং মৌসুম ছিল না। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছিল, বিপদ ঘটতে পারে। সেই কথায় কান না দিয়ে ট্রেকিং শুরু করেন। চূড়া থেকে ৫০ মিটার দূরে থাকা অবস্থায় তুমুল ঝড় শুরু হয়। বিপৎসংকুল সেই যাত্রায় প্রাণে বাঁচলেও পড়ে গিয়ে হাঁটুতে আঘাত পান স্টিফেন।
নতুন একটি দেশে গিয়ে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ভিন্নধর্মী ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারা বিশ্বভ্রমণের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করেন স্টিফেন। বিশ্বের সব কটি দেশ দেখা শেষ হলেও এখন নতুন করে ইউরোপ সফরের পরিকল্পনা করছেন তিনি। নতুন করে যেতে চান ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড ও মাল্টায়।
বিশ্বভ্রমণের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখছেন স্টিফেন। আর একটি স্বপ্ন মনের কোণে পুষে রেখেছেন। সেটা হলো—মহাকাশে ভ্রমণে যাওয়া। স্টিফেনের মতে, এই অভিজ্ঞতা তাঁর লেখা বইকে পূর্ণাঙ্গ করবে। বাইরে থেকে পৃথিবীটা দেখতে কেমন, সেটাও উপলব্ধি করতে পারবেন তিনি।