বুধবার , ৪ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

সিআইপিআরবির আলোচনা সভা প্রবীণদের বিষয়ে রাষ্ট্র, সমাজ এবং পরিবার উদাসীন

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
অক্টোবর ৪, ২০২৩ ২:৪০ অপরাহ্ণ

দেশে প্রবীণের সংখ্যা বাড়ছে। তাঁদের মধ্যে একাকিত্বও বাড়ছে। তবে হাসপাতালগুলো প্রবীণবান্ধব হয়নি। প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবাসহ সার্বিক উন্নয়নে রাষ্ট্র, সমাজ এবং পরিবার এখনো উদাসীন।

আজ বুধবার সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে। আলোচকেরা প্রবীণদের একাকিত্ব দূর করা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের বিষয়েও গুরুত্ব দেন।

১ অক্টোবর দেশে পালিত হয় বিশ্ব প্রবীণ দিবস। এই দিবস পালনের অংশ হিসেবে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে আজকের এ সভার আয়োজন করা হয়। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রবীণদের গ্রহণযোগ্যতা’।

আজকের সভায় সিআইপিআরবির ঢাকা শহরে বিদ্যমান হাসপাতালগুলোতে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা সহযোগী চৌধুরী ফারহিন বিনতে দেলোয়ার এবং রিসার্চ ম্যানেজার নোটন চন্দ্র দত্ত। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন সিআইপিআরবির উপদেষ্টা অধ্যাপক আফসানা করিম। তিনি বলেন, দীর্ঘ জীবন অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ। প্রবীণদের উন্নয়নে উদাসীন হলে চলবে না।

সভায় জানানো হয় সিআইপিআরবিতে গবেষণার জন্য একটি প্রবীণ ইউনিট চালু করা হয়েছে। ‘অ্যাভেইলেবিলিটি অব সার্ভিসেস ইন এক্সিস্টিং হেলথ কেয়ার সিস্টেম ইন রিলেশন টু জেরিয়াট্রিক কেয়ার ইন ঢাকা সিটি’ শিরোনামের গবেষণায় চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেখানে বনানী, ধানমন্ডি, করাইল বস্তি, মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের আশপাশের বস্তির ৩১১ জন প্রবীণের তথ্য নেওয়া হয়। আর ঢাকা শহরের সরকারি, বেসরকারি এবং এনজিও পরিচালিত ১০টি হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল।

২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা তথ্যের বরাত দিয়ে সভায় বলা হয়, দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৭১৯। তাঁরা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারিতে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৪৭।

চৌধুরী ফারহিন জানান, ধনী এবং দরিদ্রভেদে প্রবীণদের মধ্যে রোগের ভিন্নতা লক্ষ করা গেছে। নিম্ন আয়ের প্রবীণদের অনেকে জানেন না তাঁদের কোন ধরনের শারীরিক জটিলতা আছে। অর্থের অভাবে অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান না। এলাকার ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান। উচ্চবিত্ত প্রবীণদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা আছে।

এ ছাড়া ১০টি হাসপাতাল থেকে যে চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে হাসপাতালগুলো প্রবীণবান্ধব, তা বলা যাবে না। প্রবীণদের ব্যবহার উপযোগী শৌচাগার, আলাদা বসার জায়গা, শয্যা নির্দিষ্ট থাকা, আলাদা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থাকা বা আইসিইউতে আলাদা শয্যা বরাদ্দ রাখা, প্রশিক্ষিত নার্স থাকার মতো বিষয়গুলো নেই। প্রবীণদের ভাষ্য, চিকিৎসা নিতে গিয়ে তাঁদের হাসপাতালে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে চিকিৎসক এবং নার্সদের ব্যবহারও অনেক ক্ষেত্রেই খারাপ।

প্রবীণদের কেয়ারগিভার বা প্রশিক্ষিত পরিচর্যাকারীর বিষয়টিও গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। প্রশিক্ষিত কেয়ারগিভার না থাকলেও প্রবীণদের কেয়ারগিভারদের পেছনে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

আজকের সভার প্রধান অতিথি বয়স্বী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সেলিনা আকতার বলেন, সরকার প্রবীণদের জীবনমান উন্নয়নে ২০১৩ সালে একটি জাতীয় নীতিমালা করেছে। নীতিতে হাসপাতালে প্রবীণদের জন্য কত শতাংশ শয্যা বরাদ্দ থাকবে, সেটাসহ নানা বিষয়ের উল্লেখ আছে। তবে নীতিমালার বাস্তবায়ন নেই। রাষ্ট্র, সমাজের দায়বদ্ধতা থাকলেও সেভাবে কিছু হচ্ছে না।

৮০ বছর বয়সী সেলিনা আকতার বলেন, যখন মুঠোফোন, ফেসবুকসহ নানান প্রযুক্তি ছিল না, তখন প্রবীণেরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্প করে, আনন্দ করে দিন পার করতেন। কিন্তু এখন প্রবীণেরা একাকিত্বে ভুগছেন। দুই বছর আগে মা মারা গেছেন উল্লেখ করে জানালেন, কেয়ারগিভারের খরচ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁকে।

প্রতিটি হাসপাতালে প্রবীণদের জন্য আলাদা বিভাগ খোলা, সরকারিভাবে কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, প্রবীণেরা যাতে সহজে ও স্বল্প খরচে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন, তার জন্য হেলথ কার্ড চালুর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সেলিনা আক্তার।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে সিআইপিআরবির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম ফজলুর রহমান বলেন, গবেষণাটির পরিসর ছোট হওয়ায় প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার খণ্ডিত একটি চিত্র পাওয়া গেছে। এ ধরনের গবেষণার পরিসর বাড়ানোর বিষয়টিতে তিনি গুরুত্ব দেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালক রুহুল আমিনও গবেষণার পরিসর বাড়ানো এবং গবেষণার ফলাফল নীতিনির্ধারকদের সামনে উপস্থাপন করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন। তিনি প্রবীণদের জন্য আলাদা প্ল্যাটফর্ম বা আগে গ্রামে যেভাবে বৈঠকখানার আড্ডায় প্রবীণেরা অংশ নিতেন সে ধরনের আড্ডার আয়োজন করা জরুরি বলে উল্লেখ করেন।

আলোচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক সানিয়া তাহমিনা বলেন, প্রকৃতির নিয়মেই বার্ধক্য আসবে। মৃত্যুও অবধারিত। তবে প্রবীণেরা যাতে এই পৃথিবী থেকে ভালোভাবে বিদায় নিতে পারেন সে জন্য পরিকল্পনা করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। সিআইপিআরবির পরিচালক অধ্যাপক সাইদুর রহমানও গবেষণার বাস্তবায়নের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন।

সর্বশেষ - আইন-আদালত