রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছেন মৃত ব্যক্তি। এছাড়াও রয়েছেন সরকারি চাকরিজীবী, ইউপি ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিদ্রোহী প্রার্থী এবং প্রবাসীসহ গঠনতন্ত্র পরিপন্থি একাধিক সদস্য। আহ্বায়ক কমিটিতে এমন বিতর্কিতরা স্থান পাওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মাজেদ আলী বাবুলসহ আরও দুজন যুগ্ম আহ্বায়ক। এতে ১৭নং ইমাদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার মিয়াকে আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপির ছেলে রাশেক রহমানকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। ওই কমিটিতে আশিকুর রহমান এমপি ১নং সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হারুনুর রশিদ কাজল কয়েকমাস আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৮নং চ্যাংমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল কবীর টুটুল, ১নং খোড়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ, ২নং রানিপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন পটু, ৭নং লতিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী মন্ডল, ১১নং বড়বালা ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী সাহেব সরকার, ১৪নং দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী রবিউল ইসলাম প্রামাণিক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন। এমনকি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সম্রাট মামুন পাশা একজন প্রবাসী এবং মোকছেদুল ইসলাম মন্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মশিয়ার রহমান রাখু সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে চাকরি করছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের উপজেলা নেতারাও এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থি।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তুহিন, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সোহাগ, উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন মিলু, উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক আব্দুল মতিন মিয়া, উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাস্টার, যুগ্ম আহ্বায়ক মোকলেছার রহমান এই আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন। এছাড়াও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামান পারভেজ এবং সুবল মহন্ত বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ৯নং ময়েনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোকসেদুল আলম মুকুল একজন বিএনপি নেতা। তিনিও স্থান পেয়েছেন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে। এছাড়াও নন্দন কুমার দাস আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য পদ পেলেও তিনি নিজেকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়েছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে নন্দন কুমার দাস হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বর্তমান মিঠাপুকুর উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন কমিটিতে নেই।
এছাড়াও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার মিতু ও এনামুল হক কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক জুলফিকার আলী সাদমানী অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, আহ্বায়ক আফসার মিয়া নিজে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। যারা একসময় নৌকার বিপক্ষে কিংবা আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নির্বাচন করেছেন, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন তাদের দিয়েই এই আহ্বায়ক কমিটি করার কারণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ত্যাগী পরিশ্রমী নেতারা বাদ পড়েছেন।
সাদমানী বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আফসার মিয়া ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হয়েও উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি হয়েছেন। এছাড়া মৃত ব্যক্তি, সরকারি চাকরিজীবীরাও এই আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছেন।
তিনি বলেন, এ নিয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আমরা এই কমিটি ভেঙে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি জানাই।
মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করে নৌকাকে পরাজিত করার চেষ্টায় লিপ্ত একাধিক নেতাকর্মী এই আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। যে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে মৃত ব্যক্তিও সদস্য হয়েছেন। আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীরা পুনরায় কমিটি গঠনের দাবি জানাই।
তবে কমিটিতে সদস্য পদ পাওয়া সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মশিয়ার রহমান রাখুকে সরকারি চাকরি করেন কিনা- সাংবাদিক পরিচয়ে মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ‘না না’ বলেই সংযোগ কেটে দেন।
এ ব্যাপারে জানতে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদত হোসেন বকুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মাজেদ আলী বাবুল জাগো নিউজকে বলেন, কমিটি সাবমিট করার সাতদিন পরেই একজন মারা গেছেন। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবী যদি কারো নাম এসে থাকে তাহলে তা যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করা হবে।