বুধবার , ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

‘রাউজান মডেল’: ২০১৪ সালের পর থেকে বিনা ভোটের স্থানীয় নির্বাচন

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ

রম্য লেখক জেরাল্ড বারজানের একটা উক্তি রয়েছে এ রকম, ‘প্রতিটি নির্বাচন থেকে আমরা কী শিখি? আমরা এটাই শিখি যে আগের নির্বাচন থেকে আমরা কিছুই শিখিনি।’

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ২১ মে। তার আগে এই উক্তির কথা কেন মনে পড়ল? মনে পড়ল রাউজানের কারণে। রাউজান সম্ভবত দেশের একমাত্র জনপদ, যেখানে নির্বাচন হয়; কিন্তু ভোট হয় না। হয় না অশান্তি, হট্টগোলও।

২১ মে অন্য অনেক উপজেলার মতো রাউজানেও ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ‘ছিল’ শব্দটা এখানে অনেকটা অতীতকাল নির্দেশ করছে। করারই কথা। কারণ, ওখানে যে আর ভোটের প্রয়োজন নেই।

যথারীতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ তিন জনপ্রতিনিধি। তাই ভোট গ্রহণের তারিখকে প্রায় এক মাস আগেই অতীতকাল হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে। যেকোনো নির্বাচন এলেই রাউজানে এ রকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র দেখা যায়। নির্বাচনে এটা ‘রাউজান মডেল’ হিসেবেও বিবেচিত।

আওয়ামী লীগেও ‘না’, বিএনপিতেও ‘না’

আওয়ামী লীগেও ‘না’, বিএনপিতেও ‘না’

২০১৯ সালেও রাউজানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা ভোটে তিনটি পদে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা না বলে সিলেকশনও বলা যায়। তফসিল ঘোষণার পর কিংবা আগেই কে কে কোন পদের জন্য ‘যোগ্য’, তা নির্ধারণ বা সিলেকশন করা হয়ে থাকে।

সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতারা বসে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তাঁদের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ তখন আর প্রার্থী হন না।

এমন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নজির দেখতে হলে আরও পেছনে যেতে হবে। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাউজান থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর পর থেকে রাউজানে স্থানীয় সরকারের প্রায় সব পর্যায়ের নির্বাচনে বিনা ভোটের প্রচলন শুরু হয়।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ১৪টি ইউপি নির্বাচনের মধ্যে ১১টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২১ সালে ১৪ ইউনিয়নের সব কটিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ও সাধারণ সদস্যরা নির্বাচিত হন। একই বছর পৌরসভা নির্বাচনেও পৌর চেয়ারম্যান ও সাধারণ সদস্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

নির্বাচনের ‘রাউজান মডেল’-এ শুধু নেতিবাচক নয়, অনেকে লাভও দেখছেন। এই যেমন পুনরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রতিবেদন পড়তে পড়তে একজনের মন্তব্যটা এ রকম, ‘এতে রাষ্ট্রেরই লাভ হলো। নির্বাচনের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ও জনবল লাগত, তা অন্তত দরকার হচ্ছে না। এটাই তো নগদ লাভ।’

অতীতে বিভিন্ন সময় সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী দাবি করেছিলেন, ‘ওখানে মতদ্বৈততা কেউ করেন না। “সর্বসম্মত” সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেন। বিএনপিও বলতে পারবে না তাদের বাধা দেওয়া হয়।’

তবে ‘সর্বসম্মত’ সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ গেলে তার দফারফাও হয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে, ২০২১ সালের পৌর নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ‘সর্বসম্মত’ সিদ্ধান্তের প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বিকাশ দাশগুপ্ত নামের একজন। এরপর বিকাশের জন্য লুকিয়ে থাকা জীবন শুরু হয়েছিল। পরে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালে বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মনোনয়ন গণবাতিল হয়েছিল কৌশলে। কৌশলটা হলো প্রস্তাবকারী সমর্থনকারী নিজেরা উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, তাঁদের স্বাক্ষর জাল করা হয়।

এ হলো নির্বাচনে ‘রাউজান মডেল’-এর ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসের পথ ধরে এহসানুল হায়দার বাবুল বিনা ভোটে দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মসনদে আসীন হতে চলেছেন।

নির্বাচনী ‘ফাঁদ’ কি পুরোনো কৌশলের নতুন ব্যবহার

নির্বাচনী ‘ফাঁদ’ কি পুরোনো কৌশলের নতুন ব্যবহার

এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাউজানে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ২৯১ জন। ভোট হোক না হোক, এহসানুল হায়দারেরা তাঁদের প্রতিনিধি। জনকল্যাণে জনপ্রতিনিধিরা কাজ করবেন। কেবল নির্বাচন এলে জনগণের মতামত দেওয়ার বিষয়টা উপেক্ষিত থাকছে বারবার।

তবে নির্বাচনের ‘রাউজান মডেল’-এ শুধু নেতিবাচক নয়, অনেকে লাভও দেখছেন। এই যেমন পুনরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রতিবেদন পড়তে পড়তে একজনের মন্তব্যটা এ রকম, ‘এতে রাষ্ট্রেরই লাভ হলো। নির্বাচনের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ও জনবল লাগত, তা অন্তত দরকার হচ্ছে না। এটাই তো নগদ লাভ।’

ভোট না হওয়ার আরও কিছু লাভজনক খাত বিবেচনায় আনা যাক। এর মধ্যে পোস্টার ছাপা খরচ, মাইক খরচ, সর্বোপরি প্রচারণার ব্যয়, প্রার্থীদের জামানতের খরচ তো রয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থীদের চা-নাশতার একটা বিশাল ব্যয়ও বেঁচে যাবে। দোকানে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে গিয়ে অহেতুক মানুষের সময় ও কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না। ভোটের দিন সাধারণ ছুটিও দরকার হবে না। আরেকটা বড় ইতিবাচক দিক হলো, ভোট হলে মারামারি, খুনোখুনি, রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে। এখন সেটা থেকে মুক্ত।

আর ক্ষতি সামান্য হয়তো রয়েছে। যেমন এ রকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার জনপ্রতিনিধি দেখতে দেখতে রাউজানের একটা প্রজন্ম ভোট কী জিনিস, তা-ও ভুলে যেতে পারেন। তা-ও সমস্যা নেই। কারণ, তাঁরা তো অগ্রগামী। কারণ, বর্তমানে বসে ভবিষ্যৎকে যে মুহূর্তেই অতীতকাল হিসেবে বিবেচনা করতে পারছেন, তা তো নির্বাচনের ‘রাউজান মডেল’-এর কল্যাণেই।

সর্বশেষ - আইন-আদালত