রক্তনালী ব্লক হয়ে গেলে শরীরের কোনও অঙ্গহানি না করে অপারেশনহীন চিকিৎসার মাধ্যমেই এ ধরনের রোগীদের রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভাসকুলার বিভাগের উদ্যোগে রক্তনালী রোগের চিকিৎসাবিষয়ক সর্বশেষ তথ্য নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন বিভাগটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
সেমিনারে জানানো হয়, রক্তনালীর রোগের কারণে মানুষের অঙ্গহানি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যে রোগীদের অপারেশন সম্ভব নয় বর্তমানে চিকিৎসার মাধ্যমে এটা ছাড়াই তাদের অঙ্গ রক্ষা করা সম্ভব।
রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়ার কারণে পায়ে গ্যাঙরিন হয়। আগে গ্যাঙরিন হলে পা কেটে ফেলতে হতো। তবে বর্তমানে স্টেমসেল থেরাপি ও প্রোস্টাগ্লান্ডিন থেরাপির মাধ্যমে নতুন রক্তনালী তৈরি করে বিনা অপারেশনে এ রোগের প্রতিকার করা সম্ভব হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানান, বিএসএমএমইউয়ের ভাসকুলার বিভাগে ভ্যারিকোস ভেইন বা আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসায় লেজার থেকে শুরু করে সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া, আঁকাবাঁকা শিরা না কেটে আরএফএর মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা শিগগিরই চালু হবে।
এ ছাড়া, এ বিভাগে রক্তনালী ব্লক, অ্যানিউরিজম, ডিভিটি, টিউমার, ম্যালফরমেশন ইত্যাদি চিকিৎসাসেবা চালু আছে। কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য ফিস্টুলা নিয়মিতভাবে করা হচ্ছে। ভেনাসজনিত পায়ের আলসার ফোর লেয়ার ব্যান্ডেজের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব হচ্ছে।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান প্রশাসন বিএসএমএমইউকে এমনভাবে গড়ে তুলছে, যাতে সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা এখানেই দেওয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসার জন্য রোগীদের যাতে দেশের বাইরে যেতে না হয়, অতীতে যেসব বিষয়ে খুব উন্নতি ঘটেনি এখন সেসব বিষয়ের উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, প্ল্যাস্টিক সার্জারি, ভাসকুলার সার্জারি ইত্যাদি।
উপাচার্য তার বক্তব্যে ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়তারও আশ্বাস দেন।
বিএসএমএমইউয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের আধুনিক ডুপ্লেক্স স্ক্যান ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন রোগীকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে ৫০-৬০ জন রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ছাত্রদের নিয়মিত শিক্ষাদান ছাড়াও গত দুই বছরে ছয় জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ভাসকুলার সার্জন তৈরি এ বিভাগটির সাফল্যের মধ্যে অন্যতম। দেশে একমাত্র বিএসএমএমইউতেই চালু আছে ভাসকুলার সার্জারিতে বিশেষায়িত এমএস কোর্স।
ভাসকুলার রোগীদের অপারেশন করার জন্য বিভাগটিতে আছে সুসজ্জিত ওটি। নানান সময়ে গাইনি ও সার্জারি বিভাগের বিভিন্ন অপারেশনেও ভাসকুলার সার্জনদের অংশ নিতে হয়।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফ উল্লাহ খান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাকিবুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. সমরেশ চন্দ্র সাহা।