শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সাত্তার মাদবর মঙ্গলমাঝির ঘাট দু’মাস পর প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকাল পৌনে ৯টায় এই ঘাট থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোট শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে প্রথম দিনে অনেকটা যাত্রীশূন্য রয়েছে ঘাট।
সাত্তার মাদবর মঙ্গলমাঝির ঘাটের (লঞ্চ) ইজারাদার মোকলেছ মাদবর বলেন, প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে লঞ্চে হাজারো মানুষ পার হতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর ঘাটে লঞ্চ চলাচল দুই মাস বন্ধ ছিল। তাই ঘাটের লঞ্চ, স্পিডবোটসহ অন্যান্য চালক ও কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়ে। পাশাপাশি আমাদের কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল, তাও বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের ইনকামও বন্ধ হয়ে পড়ে।
‘আজ সকাল পৌনে ৯টায় সেতু নেভিগেশন কোং এম.এল নামের লঞ্চটি ১০ জন যাত্রী নিয়ে সাত্তার মাদবর মঙ্গল মাঝির ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে ছেড়ে যায়। ঘাটটি আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আমাদেরও আয়ের পথ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ২০টি লঞ্চ ও ২৪টি স্পিডবোট প্রতিদিন চলবে এই ঘাট দিয়ে। তবে আগামীকাল সকাল ৭টা থেকে প্রতিনিয়ত লঞ্চ চলবে।
সাত্তার মাদবর মঙ্গলমাঝির ঘাট সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়। ২৬ জুন যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হয়। তবে উদ্বোধনের আগের দিন (২৪ জুন) থেকে সাত্তার মাদবর মঙ্গলমাঝির ঘাটে ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। আজ পুনরায় লঞ্চ ও স্পিডবোট চালু হওয়ায় মালিক, চালক, যাত্রী, হকার ও ঘাটের ব্যাবসায়ীরা অনেক খুশি।
ঘাটের হকার আল আমিন, কালু হাওলাদারসহ অনেকে বলেন, আমরা এই ঘাট এলাকায় ঝালমুড়ি, আইসক্রিম, পেঁয়াজু, পেয়ারা, শরবতসহ হরেকরকম মুখরোচক খাবার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু ঘাটে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় আমাদের বিক্রিও কমে যায়। আবার ঘাটটি চালু হওয়ায় আমাদের বেচা বিক্রি বাড়বে।
ভ্যানচালক নাজমুল কাজী, রিকশাচালক রাজিব ঘরামী, সিএনজি চালক সোহেল মাঝি, সালাউদ্দিন ছৈয়ালসহ অনেকে বলেন, যানবাহন ও যাত্রীর সমাগম যত বেশি হয় আমাদের আয়ও তত বেশি হয়। ঘাটটি বন্ধ হওয়ায় আয় রোজগার কমে যায়। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। এখন আবার ঘাট চালু হয়েছে আশা করছি রোজগার বাড়বে।
হোটেল মালিক মোহাম্মদ আলী, মো. সোহেল হোসেন বলেন, লঞ্চ ও স্পিডবোটের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা হোটেল থেকে ভাত, খিচুড়ি, পরোটাসহ অন্যান্য জিনিস কিনে খেতেন। কিন্তু ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছিল। এতে আমাদের ব্যবসাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ঘাটটি চালু হওয়ায় বেচা বিক্রি বাড়বে।
লঞ্চ চালক শহীদ মিস্ত্রী বলেন, ঘাটটিতে লঞ্চ বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছিলাম। আবার লঞ্চ চালু হওয়ায় বেকারত্ব দূর হয়েছে। ধন্যবাদ ঘাট কর্তৃপক্ষকে।
লঞ্চযাত্রী জাকির হোসেনসহ অনেকেই বলেন, আমাদের বাড়ি লঞ্চ ঘাটের কাছে। ঘাটটি বন্ধ থাকায় অনেক দূর ঘুরে ঢাকা যেতে হতো। খরচ বেশি হতো, সময় বেশি লাগতো। এখন লঞ্চ দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। তাতে টাকা, সময় ও খরচ বাঁচবে।
সাত্তার মাদবর মঙ্গলমাঝির ঘাট ইজারাদার নেছার উদ্দিন মাদবর বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রী না থাকায় এই ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘাটের ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলারের চালক ও কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়েন। এছাড়া হকার ও দোকানদারদের বেচাবিক্রি বন্ধ হয়ে পড়ে। আয় না থাকায় অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিল। পুনরায় ঘাটটি চালু হওয়ায় মানুষের কর্মসংস্থান হলো।