নাটোরের লালপুরে শিশু ইরিন সুলতানা ঈশা হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। অনৈতিক কাজের সময় বাধা দেওয়ায় পিতার থাপ্পড়ে ঈশার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তিনজনের নামে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।
আসামিদের দুজন পলাতক ও একজন জামিনে রয়েছেন।
আসামিরা হলেন— আড়বাব ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামের নিহত ঈশার বাবা মো. ইলিয়াস আলী (৩১), প্রতিবেশী মো. নূর উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) এবং মো. ইসলাম আলী মোল্লার স্ত্রী মোছা. শেফালী বেগম (৪৮)।
জানা যায়, গত বছর ১৫ মার্চ উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামের একটি ডোবা থেকে ওই শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন রাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হীরেন্দ্রনাথ প্রামাণিক ও এসআই মোল্লা সোহেল মাহমুদ বলেন, মামলার বাদী (তদন্তে প্রাপ্ত অভিযুক্ত আসামি) নিহতের বাবা আনসার বাহিনীতে কর্মরত মো. ইলিয়াস আলী (৩১) ও অপর আসামী প্রতিবেশী মো. নূর উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) সম্পর্কে পরস্পর চাচি ও ভাতিজা। শোভা খাতুনের স্বামী কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গত ২০২১ সালের জুন মাসে কিডনি অস্ত্রোপচার করে দুর্বল হয়ে যান। এক পর্যায়ে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শোভা খাতুন।
ঘটনার দিন ১৫ মার্চ ২০২২ ইলিয়াস আলী একসঙ্গে নাস্তা করে মেয়ে ইরিন সুলতানা ঈশাকে কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে শোভা খাতুনের বাড়িতে যান। মেয়েকে বাড়ির বারান্দায় সিঁড়ির উপর দাঁড় করিয়ে তারা আপত্তিকর সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টাকালে মেয়ে ঈশা বাবাকে ধরে টানাটানি শুরু করে। এ সময় ইলিয়াস আলী উত্তেজিত হয়ে ঈশাকে থাপ্পড় মারেন। ঈশা মাটিতে পড়ে কান্নার চেষ্টা করলে ইলিয়াস আলী অনৈতিক কাজের সময় মেয়ের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
এরপর ইলিয়াস আলী মেয়ে ঈশার লাশ কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী মো. ইসলাম আলী মোল্লার স্ত্রী মোছা. শেফালী বেগমের (৪৮) বাড়ির সামনে বেলকনির সিঁড়ির ওপর ফেলে রাখেন। ওই সময় শেফালী বেগম বের হয়ে দেখেন বাড়ির মুরগি ঈশার মাথায় ঠোকর দিলেও কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তখন তিনি এগিয়ে গিয়ে ঈশাকে মৃত অবস্থায় দেখে মৃতদেহ বাড়ির বাইরে টয়লেটের মধ্যে রেখে দেন।
কিছুক্ষণ পর ঈশার মা তার মেয়েকে ডাকাডাকি ও খোঁজাখুঁজি করিতে থাকলে শেফালী বেগম ভয় পেয়ে মৃতদেহ বস্তায় ভরে বসতবাড়ির পশ্চিম পার্শ্বে সামান্য পানি থাকা ডোবার মধ্যে ফেলে দেন। এরপর ঈশার মা মোছা. আঁখি খাতুন (২৫) খোঁজাখুঁজি করে মেয়েকে না পেয়ে স্বামী ইলিয়াস আলীকে মোবাইলে ফোন করে জানান।
ইলিয়াস আলী বাড়িতে এসে ঘটনার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচারণা করেন ও সাধারণ ডায়েরি করার জন্য থানায় যান। এ দিকে প্রতিবেশী কয়েকজন বিষ দেওয়ার জন্য আমবাগানে যাওয়ার সময় ডোবায় বস্তায় মৃতদেহ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
লালপুর থানার ওসি মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, ঘটনার দিন গ্রেফতার মোছা. শোভা খাতুন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। অপর দুই আসামি ঈশার বাবা মো. ইলিয়াস আলী ও মোছা. শেফালী বেগম পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।