আর কদিন পরেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুর ফিতর। এ উপলক্ষে এখনই শুরু হয়েছে কেনাকাটা। রাজধানী ঢাকার প্রায়ই সব মার্কেটে কমবেশি শুরু হয়েছে বিকিকিনি।
ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা মিরপুর। সেখানেও জমতে শুরু করেছে ঈদবাজার। বিশেষ করে ফুটপাতে কেনাবেচা জমজমাট।
শিল্পী আক্তার, চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ভিড় বাড়ার আগেই কেনাকাটা সেরে ফেলতে চান তিনি। তাই ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন মিরপুর ১০ নম্বর সংলগ্ন হোপের গলিতে। বিভিন্ন দোকানে দরদাম করে পছন্দের জিনিস কিনছেন তিনি।
কেনাকাটার এক ফাঁকে জাগো নিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটার জন্য আগে শপিংমলই যেতাম। তবে বাসাভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে গন্তব্য পরিবর্তন করে আসতে হচ্ছে ফুটপাতে। ফুটপাতে বললে অনেকেই নাক সিটকায়, তবে ফুটপাতে ও অনেক ভালো পণ্য থাকে। একটু দেখে কিনতে হয়।’
শিল্পী আক্তার একা নন, শপিং সেন্টার থেকে গন্তব্য পরিবর্তন করা মানুষের সংখ্যা এবার বাড়ছে। আর এ কারণেই মিরপুর ১০, ২ ও ১ নম্বরের ফুটপাত রাত ১০টা অবদি থাকছে জমজমাট।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা মহামারির পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও পারেননি তারা। এবার ১০ রোজার পর থেকে ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বিকেলের পর থেকে দম ফেলার ফুসরত থাকছে না ফুটপাতের দোকানদারদের।
মিরপুর ১০ নম্বরের হোপের গলি সংলগ্ন ফুটপাত থেকে শুরু করে মিরপুর ২ নম্বর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম পর্যন্ত এলাকার ফুটপাত সারাবছরই জমজমাট থাকে। ছাত্র-ছাত্রী ও নিম্নআয়ের মানুষজনই মূলত এখানকার ক্রেতা।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকালে মিরপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম ফুটপাতগুলো। ঝামেলা এড়াতে বেশিরভাগ বিক্রেতা একদরে বিক্রির চেষ্টা করছেন।
ক্রেতারা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি পণ্যে ৫০-১০০ টাকা দাম বেড়েছে। দামাদামি করেই ঈদের পোশাক ও আনুষঙ্গিক জিনিস কিনতে চান তারা।
জানা গেছে, ডিজাইন ও মানভেদে মেয়েদের স্যান্ডেল জোড়াপ্রতি পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া পাম সু ৪৮০ ও হাল্কা কেডস ২০০-৩৫০ টাকা, একটু ভালো মানের কেডস পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। এছাড়া ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় মিলছে গেঞ্জি। প্লাজো, প্যান্ট, জগার্স পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। শার্টের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে শার্ট। টু পিস, থ্রি পিস কিনতে খরচ হবে ৩৫০ থেকে ১২০০ টাকা।
মেয়েদের টপের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, জিন্সের দাম পড়বে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে, রম্পার্সের দাম ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাপ্তান ৩০০ টাকা ও কামিজ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
হিজাব, ওড়না মানভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, বোরকা ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, লেডিস ব্যাগ ৩৫০ থেকে ১২০০ টাকা ও লেডিস হ্যান্ড ব্যাগের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে পাওয়া যাচ্ছে শাড়ি।
বাচ্চাদের স্যান্ডেলের দাম ২৫০ টাকা, পাঞ্জাবি ও পায়জামা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বাচ্চাদের জিন্সের দাম বয়সভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, বাচ্চাদের ফ্রক ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকায় মিলছে।
পুরুষদের পাঞ্জাবির দর ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকার, ফতুয়া ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, লুঙ্গির দাম ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা, পোলো টি শার্ট ২০০-৪০০ টাকা, টি শার্ট ২৫০-৩০০ টাকা। এছাড়া, লোফার ৯০০ থেকে ১৫০০ টাকা, কেডস ৮০০ থেকে ১৫শ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। জিন্স প্যান্টের দাম ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, শার্টের দাম ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেল্টের দাম ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা, মানিব্যাগের দাম ১০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে।
এছাড়া মেয়েদের বিভিন্ন কসমেটিকস পণ্য যেমন চুড়ি, কানের দুলসহ আরও অনেক পণ্য পাওয়া যাচ্ছে ২০ টাকা শুরু করে এক হাজার টাকায়।
ক্রেতারা বলছেন, অথচ একই এলাকায় প্রধান সড়কঘেষা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানে এসব পণ্য কিনতে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা।
হোপের গলিতে মেয়েদের জামা বিক্রেতা শাহজাহান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এখানে ওয়ান পিস বিক্রি করছি সাড়ে তিনশ টাকায়। সরাসরি আমাদের ফ্যাক্টরি থেকে আনায় এই দামে বিক্রি করতে পারছি। এই দামে কেউই এই জিনিস বিক্রি করতে পারবে না। একইভাবে থ্রি পিস, টপস, ফ্রক, পায়জামা আমরা ভালো দামে বিক্রি করছি।’
ক্রেতা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিক্রি খুব ভালো। বিকালের পর ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করে।
মিরপুর ১০ নম্বর আইডিয়াল স্কুল সংলগ্ন ফুটপাতে কসমেটিকস বিক্রেতা নাইম জাগো নিউজকে বলেন, এই সপ্তাহ থেকে ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্রেতারা কথা বলার সুযোগ পায় না। অন্য সময়ের তুলনায় বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে।
তিনি বলেন, সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কসমেটিকস, জুয়েলারির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। যারা দাম জানেন, তারা অহেতুক দামাদামি না করে কিনে চলে যাচ্ছেন, যারা দাম জানেন না তারাই ঝামেলা করছেন।
ফল ব্যবসায়ী আল আমিন তার দুই মেয়ের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে গিয়েছিলেন মিরপুর। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘এখন আর শোরুম, ফুটপাতে পার্থক্য নাই। দুই জায়গায় একই পণ্য। ফুটপাতে দাম কিছুটা কম। তবে ঈদ উপলক্ষে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।’