সরকারবিরোধী আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের পর এবার বাংলাদেশ নিউট্রাল ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট নামে আরও একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।
রোববার (১৮ জুন) সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি সুপ্রিম কোর্ট বারের গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি জানিয়েছে।
এ নিয়ে এক সপ্তাহে দেশের শীর্ষ আদালতের আইনজীবীদের দুটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করলো। নতুন সংগঠনের ৩৫ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে এসসিবিএ’র সাবেক সহ-সভাপতি ওয়ালিউর রহমান খানের নাম ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে তৈমূর আলম খন্দকারকে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন।
এই কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে এস এম জুলফিকার আলী জুনুকে। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, শওকতুল হক, খাজা ইকবাল আহসানুল্লাহ, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, আবুল মনসুর প্রমুখ।
এর আগে ১২ জুন ইউনাইটেড ল’ ইয়ার্স ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেদিন সংবাদ সম্মেলন করে ৩৬ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীনকে এর আহ্বায়ক করা হয়েছে।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন। এর নিজস্ব একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। এতে নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচন কমিশন গঠনের বেশ অস্পষ্টতা রয়েছে। এটি সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। এমনকি গঠনতন্ত্রে স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশন গঠনের কোনো বিধান রাখা হয়নি। গঠনতন্ত্রের ১৫ (১) ধারায় সম্পাদক কর্তৃক নির্বাচন তফসিল ঘোষণার বিধান রাখা হয়েছে। লিখিত না থাকলেও প্রথাগতভাবে ব্যালট পেপার প্রিন্টিং এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব সম্পাদকের হাতে রাখা হয়েছে। ব্যালট পেপারের এক পাশে নির্বাচন সাব-কমিটির আহ্বায়কের স্বাক্ষর এবং অন্য পাশে সম্পাদকের স্বাক্ষরের রীতি রয়েছে। এছাড়া, গঠনতন্ত্রের ১৫/(৬) ধারাতে কার্যকরী পরিষদ কর্তৃক ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাচন সাব- কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।
বারের একজন নিয়মিত সিনিয়র সদস্যকে সাব-কমিটির আহ্বায়ক করার কথা বলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তারা গঠনতন্ত্রের ১৫ (৬) সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন। তারা ইলেকশন সাব-কমিটির পরিবর্তে একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব রাখেন।
তিনি বলেন, এই কমিশনের সদস্য সংখ্যা ১০ এর অধিক হতে পারে। এই কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনোনীত হবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্যে থেকে বা বিতর্কিত নন এমন একজন নিয়মিত সিনিয়র আইনজীবী। আর এর সদস্য সচিব মনোনীত হবেন প্রাক্তন বা কার্যকরী পরিষদের সহ-সভাপতি। ব্যালট পেপার মুদ্রণ, সংরক্ষণ এবং তফসিল ঘোষণার দায়িত্ব থাকবে নির্বাচন কমিশনের ওপর, ব্যালট পেপারে সম্পাদকের কোনো স্বাক্ষর থাকবে না, ব্যালট পেপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সদস্য সচিবের স্বাক্ষর থাকবে।
এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান বলেন, এভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়ার মতো ঘৃণ্যতম কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হবে না। গঠনতন্ত্রের ইলেকশন রুলস এর বিধি ২ এর ৩ উপবিধি সংশোধন করে রাজনৈতিক প্যানেলভুক্ত নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রস্তাব করেন তারা।
তিনি বলেন, যতদিন এই পবিত্র অঙ্গন থেকে রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠন হিসেবে আইনজীবীদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা না যাবে ততদিন পর্যন্ত আদালত আঙ্গিনায় পেশার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।
সংগঠনের পক্ষে থেকে আইনজীবীদের উচ্চ আদালতসহ দেশের সব জেলা আদালতের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্যানেলভিত্তিক নির্বাচনকে পরিহার করার আহ্বান জানানো হয়।
এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিচার প্রার্থীদের শেষ আশ্রয়স্থল ও ভরসার জায়গা। কিন্তু গত ১৪-১৫ ইং মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আদালত আঙ্গিনায় প্রায় প্রতিদিনই যে ধরনের ঘটনা ঘটছে তা মোটেও কাম্য নয়। পাল্টা কর্মসূচি, মিছিল, হাতাহাতি এমনকি বার্ষিক ইফতার মাহফিল থেকেও আইনজীবীরা বঞ্চিত হয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা আইনজীবীরা নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ ও মুক্তির লক্ষ্যে সাধারণ আইনজীবীদের নিয়ে নিউট্রাল ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে।