কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল হাসান টুটুলকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে চার আসামিকে বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের ওপর ডেথ রেফারেন্স ও দণ্ডিতদের আপিল শুনানি শেষে হয়েছে। শুনানি শেষে এ মামলায় এক আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল ও দুই আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট আসামি আমিনুল হকের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। পাশাপাশি আসামি দুলাল মিয়া ও সোহাগ মিয়াকে খালাস দিয়েছেন। তাদেরও বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে আজ আসামি দুলাল মিয়া ও আমিনুল হকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী একেএম ফজলুল হক খান ফরিদ। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ আবুল হাসনাত, শেখ মো. শামসুজ্জামান ও ইসরাত হাসান। আসামি মো. সোহাগ মিয়ার পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুনুর রশিদ।
রায়ের বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ আবুল হাসনাত জানান, এ মামলায় আমিনুল হক ও মো. সোহাগ মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছিল। দুলাল মিয়ার স্বীকারোক্তি ছিল না। তবে, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণ আমিনুল হকের স্বীকারোক্তিকে সমর্থন করলেও সোহাগ মিয়ার স্বীকারোক্তিকে সমর্থন করেননি। এসব কারণে দুলাল ও সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।
খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে নোট দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন অর রশিদ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট পাকুন্দিয়ার চরকাওনা গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল হাসান ওরফে টুটুলকে স্কুল থেকে ফেরার পথে অপহরণ করা হয়। ওই দিন টুটুলের মায়ের মোবাইল ফোনে কল করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
বিষয়টি পুলিশকে জানালে রাতেই তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ও হোসেনপুর সার্কেলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের অভিযান শুরু হয়। পরে টুটুলের বাবার বন্ধু দুলাল মিয়া, সোহাগ মিয়াসহ চারজনকে আটক করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একই বছরের ১৪ আগস্ট ভোরে পুলিশ চরকাওনা নয়াবাজার-সংলগ্ন একটি ঝোপের ভেতর থেকে টুটুলের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে। টুটুলকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় টুটলের বাবা কামাল উদ্দিন বাবু চারজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন- পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাওনা গ্রামের মো. ডালিম, মো. সোহাগ মিয়া, মো. দুলাল মিয়া ও আমিনুল হক।
পরে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৩ মে কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আওলাদ হোসেন ভূঁইয়া চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল দায়ের করেন।