মানিক মিয়ার অভাবের সংসার। পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছিল তার। পাশের গ্রামের একজনের পরামর্শে বাজারে মাছ কাটা শুরু করেন তিনি। এরপর থেকে ভালোই চলছে তার পরিবার। আগের মতো সংসারের অভাব নেই। সন্তানদের পড়ালেখা, সংসার খরচের এখন ব্যাংকেও জমা হচ্ছে কিছু টাকা। শুধু মানিক মিয়া নয়, এভাবে বাজারে মাছ কেটে ভাগ্যের চাকু ঘুরিয়েছেন অনেকে।
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন বাজারে মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করছে এমন প্রায় তিন শতাধিক মানুষ। সবচেয়ে বেশি মাছ কাটা পেশার লোক রয়েছে বারইয়ারহাট পৌর মাছ বাজারে। এখানে অর্ধশত মাছের আড়ত ও মাছ বাজার ঘিরে চলছে তাদের কর্ম।
কোরবান আলী নামের একজন জানান, আগে অভাবের সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরাতো। এখন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সুখে কাটছে তাদের দিন। তাদের সুখের মূল উৎস বারইয়ারহাট পৌর মাছ বাজার।
তিনি আরও জানান, বারইয়ারহাট বাজারে প্রতিদিন ভোরে তার মতো শতাধিক ব্যক্তি মাছ কাটা শুরু করেন। দুপুর হওয়ার আগে শেষ কাজ। ফলে দিনের বাকি সময়ে অন্য কাজ করে বাড়তি আয় করা যায়। অনেক ক্রেতা বাড়িতে মাছ না কেটে বাজার থেকে কেটে নিয়ে যান। তখনি ডাক পড়ে মাছ কাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের। প্রতি কেজি মাছ কাটতে ২০ টাকা গুনতে হয়। তবে বেশি মাছ কাটলে আরও কম দামে কাটা হয়ে থাকে।
নুরুল হুদা নামের একজন বলেন, আমি গত আট বছর ধরে এ পেশায় আছি। প্রতিদিন মাছ কেটে ১০০০-১২০০ টাকা আয় হয়। মাঝে মধ্যে আরও বেশিও আয় হয়ে থাকে। মা-বাবা স্ত্রী দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভালো চলছে আমার সংসার।
বিকাশ চন্দ্র নাথ নামের একজন জানান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য বারইয়ারহাট বাজার থেকে মাছ সরবরাহ করে তা কেটে নিয়ে যায় আয়োজকরা। প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক মণ মাছ কাটতে পারি। ফলে প্রতিদিন তিনি আয় করেন ৮০০ টাকা। কখনো সে আয় ১২০০-১৫০০ টাকা গিয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া মাছে তেলসহ অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে বাড়তি আয় হয় বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাছে আড়ৎ বারইয়াহাট পৌর মাছের আড়ৎ। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে কয়েক টন মাছ চট্টগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাছের ক্ষেত্র মুহুরি প্রজেক্ট। ফলে উপজেলাসহ পাশের, ফেনী, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, রামগড়সহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ বৃহৎ সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য বারইয়ারহাট মাছ বাজার থেকে মাছ সরবরাহ করে থাকেন।
বারইয়ারহাট মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল আউয়াল বলেন, বারইয়াহাটের মাছ চট্টগ্রামের জন্য প্রসিদ্ধ। চট্টগ্রামের ফিসারি ঘাট, কর্ণফুলী মার্কেটের মাছ বিক্রেতারা বারইয়াহাটের মাছ পেলে উচ্চস্বরে ডেকে বিক্রি করে থাকে। এছাড়া মাছ কেটে অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে বলে জানান তিনি। তার আড়তে প্রায় অর্ধ শতাধিক লোক মাছ কাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া উপজেলার আরও বিভিন্ন বাজারের ২০০ লোক এ পেশার সঙ্গে জড়িত বলে জানান তিনি।
বারইয়ারহাট বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, এখন মানুষ আগের থেকে অনেক সুখি। বাড়িতে নিয়ে মাছ কাটতে চায় না। তাই মাছ কাটার সঙ্গে জড়িতদের চাহিদা বেড়েছে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।