শুক্রবার , ৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

নতুন বছরে বৈশ্বিক মন্দা কি সত্যিই বাড়বে?

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
জানুয়ারি ৬, ২০২৩ ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা ২০২২ সালের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন একটি কাজে। সেটি হচ্ছে, ২০২২ সালের ঠিক কোন সময়টায় অর্থনৈতিক মন্দায় পড়বে পৃথিবী তা অনুমানে।

২০২২ সালে বিশ্ব মন্দায় পড়ার উপক্রম হয়েছিল বটে। তবে কেউই নিশ্চিত ছিলেন না, আদৌ যদি মন্দায় পড়ে তবে কবে পড়বে। এখন বিগত বছর শেষে এবং নতুন বছরের শুরুতে আরেকটি অনুমান উদ্ঘাটনে আদাজল খেয়ে লেগেছেন অর্থনীতিবিদরা। তা হলো, মন্দায় পড়বে না তো ২০২৩ সাল?

ধারণাটি বিশ্লেষণ করা যাক। ২০২২ সালের শুরুতে কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেছিলেন, মন্দা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। তবে একাধিক গবেষণানির্ভর প্রতিবেদন থেকে ক্রমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মার্কিন শ্রমবাজার যে মাত্রায় দৃঢ় তাতে করে এমনকি বছরের প্রথমার্ধেও আমেরিকার অর্থনীতি মন্দায় পড়তে পারে, তেমন আশঙ্কা ক্ষীণ।

আমি মনে করি, চলতি বছরও মার্কিন বাজারের তেমন হেরফের হবে না। ফলে অনেকে যদিও মনে করেন একটি পতন অবশ্যম্ভাবী, আমি বিশ্বাস করি, মার্কিন অর্থনীতির মন্দায় পড়ার আশঙ্কা কম। আমার বরং ধারণা, ফেডারেল রিজার্ভ এবং অন্যান্য বড় ব্যাংক যে হারে দ্রুত সুদের হার বাড়াচ্ছে, তাতে করে মন্দা যদি হয়ও ২০২৩ সালে মন্দার আশঙ্কা আধাআধি; তবে পরবর্তী দুই বছরের (২০২৪-২০২৫ সাল) যে কোনো সময়ে হতে পারে মন্দা।

ইউরোপীয় অর্থনীতি বর্তমানে শক্ত ধাক্কা খেয়েছে ক্রমাগত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে। পরপর দুই কোয়ার্টার ক্রমবৃদ্ধির বদলে ক্রমহ্রাস হয়েছে ইউরোপের জিডিপি। ফলে ২০২৩ সালে মন্দায় পড়তে পারে তারা। এদিকে আমি মনে করি, ইউরোপের যতটা না খারাপ অবস্থা তার চেয়ে বেশি কাহিল চীন।

ইউরোপীয় অর্থনীতি এখন যেসব সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, একই সমস্যা রয়েছে চীনা অর্থনীতিরও। তবে চীনের একটা বাড়তি সমস্যা হচ্ছে, চীনের আবাসন খাত বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। এদিকে নতুন করে ক্রমাগত কোভিড রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিও বেইজিংয়ের বড় মাথাব্যথার কারণ; বিশেষত টিকার মাধ্যমে কোভিড নিয়ন্ত্রণে কর্ণপাত না করে তারা পুনরায় উন্মুক্ত করতে চাচ্ছে অর্থনীতি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চার দশক ধরে চীন যে অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল, ২০২৩ সালে তার প্রবৃদ্ধি হবে ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে কম। তবে সেক্ষেত্রেও ২০২৩ সালের প্রথম দুই কোয়ার্টারে চীনা অর্থনীতি সংকুচিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না।

কারণ, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকালেও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যখন ৮ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছিল, তখনও চীনের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সেভাবে কমতে দেখিনি আমরা। বর্তমান সূত্র হচ্ছে-কোনো অর্থনীতি পরপর দুই কোয়ার্টার নেতিবাচক জিডিপি প্রবৃদ্ধির শিকার হলে ওই অর্থনীতিটি মন্দায় পড়েছে বলে চিহ্নিত করা হয়। এ সূত্রে কিন্তু চীনকে মন্দায় ফেলা কঠিনই হবে।

এটা বাস্তব যে, এরই মধ্যে অর্থনৈতিক ঝামেলায় পড়েছে বেশকিছু দেশ। আমার দৃষ্টিতে সেগুলো যতটা বৈশ্বিক অর্থনীতির নানা শক্তির প্রভাবে, তার চেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ নীতি প্রণয়নে ত্রুটির কারণে। এসব ত্রুটির বিষয়ে কিন্তু আগে থেকে সতর্কও করা হয়েছিল কিছু দেশকে।

উদাহরণ হিসাবে বলি, ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অপ্রয়োজনে ইউরোপ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রুশ গ্যাসের ওপর। ফলে ক্রেমলিন যখন ইউক্রেনে আক্রমণ চালায়, দুর্বল হয়ে পড়ে ইউরোপীয় অর্থনীতি। আবার চীনের জিরো-কোভিড নীতি যদি মান্ধাতার আমলের হয়, কোভিড নীতি বলে কোনো বস্তু ছিল না ইউরোপে।

ফলে ইউরোপের সংযম নীতিকৌশল মৃত্যুর সংখ্যা থামিয়ে রেখেছিল সাময়িকভাবে। এর প্রভাব অর্থনীতিতে স্পষ্ট হয় ২০২১-২২ সালে।

যুক্তরাষ্ট্রের কথা যদি বলি, ২০২২ সালে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণে অসংখ্য ভুল রয়েছে তাদের। দেশটি ইচ্ছাকৃতভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় গত বছর। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে। অথচ এ সংস্থাটিকেই কার্যকর করে তুলতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাঠামোর উন্নয়নে কয়েক দশকের উল্লেখযোগ্য পরিশ্রম ছিল তাদের। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ভুল ছিল।

অথচ সেটি সংশোধনের তেমন কোনো উদ্যোগই নেননি জো বাইডেন। তিনি অবশ্য মোক্ষম বাণিজ্য অস্ত্র হিসাবে বেছে নিয়েছেন ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্টকে। তবে আমার সমালোচনা হচ্ছে, আইনটি একদিকে ইউরোপের বাজারে অস্থিতিশীলতা বাড়াবে; একই সঙ্গে খর্ব করবে বিশ্ব বাণিজ্যের একাধিক শক্ত কাঠামোকে। এখনো হয়তো ফেডের সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাব তেমন প্রতিভাত নয়, তবে লক্ষণ বলে এটি বুদবুদ এবং বেশিক্ষণ টিকবে না।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে ওয়ালস্ট্রিট চূড়ায় ছিল। স্টক বাজার সেখান থেকে নামতে শুরু করে মার্চের পর। এদিকে বন্ড, আবাসন এবং অন্যান্য বাজার সম্পদ যেগুলো রয়েছে, সেগুলো আগামী বছরও তেমন ভালো করতে পারবে না মুদ্রানীতির কারণে।

আবার ডিসকাউন্ট রেট কম হওয়ায় এবং সুদের হার শূন্যের নিচে চলে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ আয়ের ওপর পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। শেয়ারবাজারে ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো বিপজ্জনক সম্পদ যুক্ত হয়েছিল গত বছর। ২০২২ সালের শেষ প্রান্তে তাদের ক্ষতিকর প্রভাবও দেখেছি আমরা। চলতি বছরও সেটি অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয়।

সর্বোপরি আমি যেটা মনে করি তা হচ্ছে, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির পথ মসৃণ হবে না; তবে মন্দায় পড়বে না এটি। প্রবৃদ্ধি হয়তো ধীর হবে, তবে সেটিকে মন্দা বলা যাবে না। দুই বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কোনো সিঙ্গেল কোয়ার্টারেও প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হতে দেখিনি আমরা।

পরপর দুই কোয়ার্টার তো কল্পনাতীত। সেদিক থেকে কিন্তু ১৯৭৪ ও ১৯৮১ সালের জ্বালানি তেলঘটিত অর্থনৈতিক সংকটকেও আমি ঠিক মন্দা বলতে রাজি না। এমনকি আপাতদৃষ্টিতে যখন মন্দা চলছে বলে মনে হয়, তখনও অগ্রসর অর্থনীতির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিকে ভারসাম্যে নিয়ে আসে উদীয়মান অর্থনীতির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি।

ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের অনুমান যদি সত্য হয়, তাহলে ২০২১ সালের ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বদলে ২০২৩ সালে হয়তো প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ২ শতাংশ হবে। তবে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় পড়বে বলে মনে হয় না।

প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে ভাষান্তর : জায়েদ ইবনে আবুল ফজল

জেফরি ফ্র্যাঙ্কেল : অধ্যাপক, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র

 

সর্বশেষ - দেশজুড়ে