সোমবার , ৭ নভেম্বর ২০২২ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

নোয়াখালী-১ দলাদলি-হানাহানিতে ‘ব্যাকফুটে’ আওয়ামী লীগ, শক্ত অবস্থানে বিএনপি

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
নভেম্বর ৭, ২০২২ ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বিএনপির ঘাঁটিখ্যাত নোয়াখালী-১ আসন। এখানে বিগত দুই নির্বাচনে জয় পান আওয়ামী লীগের এইচ এম ইব্রাহীম। একবার আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এর আগে টানা পাঁচবার ছিল বিএনপির দখলে। স্থানীয় আওয়ামী লীগে কেন্দ্রে টানা ক্ষমতায় থাকার প্রভাব প্রবল। সবকিছুতে চলে দলাদলি-হানাহানি। প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে নেতারা ব্যবহার করছেন উঠতি বয়সীদেরও, যা তাদের ভোটের দৌড় থেকে ছিটকে দিচ্ছে। অপরদিকে বিএনপি দলীয় স্বার্থে সংঘবদ্ধ। দলের যে কোনো প্রার্থীর জন্যই লড়তে প্রস্তুত।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আসনটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তেমন প্রস্তুতি বা তোড়জোড় চোখে পড়েনি। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই দলেরই নির্বাচনের ভালো প্রস্তুতি আছে। আসনটিতে বিএনপির সমর্থক ও ভোটার বেশি। আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ও তার কর্মীদের প্রভাবও আছে বেশ।

এখানকার বড় সমস্যা— মাদক ও উঠতি বয়সীদের উৎপাত। এ কারণে অতিষ্ঠ মানুষ। অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন করলেও তৃণমূলের নামধারী কর্মীদের আচরণে বেশ খারাপ অবস্থা সমাজে। কেউ কাউকে মানে না। ভাই ভাইয়ের বিরোধেও জড়িয়ে যায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। দলাদলি আর হানাহানি এখনকার পরিবার বা ঘরেও ঢুকেছে। শক্ত বলয় গড়তে গিয়ে নেতারাও প্রশ্রয় দিচ্ছেন এসব। সমাধানে অনেকে নেতৃত্বের পরিবর্তন চান। যেটি আওয়ামী লীগের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে ভোটে।

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, আগামী নির্বাচনে পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ, পরিবর্তন না হলে লাগাম টেনে ধরা মুশকিল। টানা ক্ষমতায় থাকায় এখন সবাই আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে যাচ্ছে তাই করছে।

এখানে ভোটেও এগিয়ে বিএনপি। কারণ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। বিপরীতে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। যে আসুক তারা মাঠে নামবে কোমর বেঁধে। যদিও বিএনপির মনোনয়নেও লড়াই হবে নবীন-প্রবীণে।

জানা যায়, এখানে বর্তমান সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীমের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বশির আহমেদ, চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির, সোনাইমুড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার রুহুল আমিন এবং ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন জিটু।

তবে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক এমপি মাহমুদুর রহমান বেলায়েত বা সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ এ আসনের। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকরা প্রার্থী হিসেবে তাদেরও চান। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের এসব নেতা প্রার্থী হলে নৌকার জয় সহজ হবে। দলের বাইরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে।

এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান বেলায়েত জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি কোনো সময় এমপি নমিনেশন চাইনি। ছাত্রাবস্থায় একবার বঙ্গবন্ধু ডেকে নিয়ে দিয়েছেন, তখন বাধ্য হয়ে আমি নির্বাচন করেছি। দ্বিতীয়বারও একই অবস্থা, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বলেছেন। আমি তখন ব্যবসায়িক কাজে লন্ডনে যাবো, টিকিটও করেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, দেশে যাও। আমি তার কথা ফেলিনি। তৃতীয়বারও মাহবুবুর রহমান সাহেব আর আমি নির্বাচন করেছিলাম। আমরা একই বয়সের। সেই নির্বাচনে মাহবুবুর রহমান সাহেব কোটি কোটি টাকা খরচ করেন, আমি সেটা করিনি। আমি তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমি আর নির্বাচন করবো না। এখনো নির্বাচন করার চিন্তা করি না।’

নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এই সফেদ রাজনীতিক বলেন, ‘নেত্রী যদি দেন, আর যদি দেখি দুর্নীতিবাজগুলো বাদ যায়, তখন বিবেচনা করবো। এর আগে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলবো না।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছও একই সুরে কথা বলেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নেত্রী যদি মনে করেন আমি প্রার্থী, তাহলে আমি প্রার্থী। বা দল যদি মনে করে এবং এলাকার জনগণ যদি ভালো মনে করে তাহলে আমি প্রার্থী। আমার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা এক্ষেত্রে মুখ্য নয়। তবে এটি ঠিক, আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করেছি। ১৯৯০ সাল থেকে পরবর্তী বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ২০০১ এ বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা দখলের পর নেতাকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন নীপিড়ন হয়েছে, সে সময়টাতে আমি সার্বক্ষণিক নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। সংগঠনেও কাজ করেছি দীর্ঘদিন। কিন্তু গত কয়েক বছর এলাকায় কম যাই। কারণ এখন যে পদ্ধতিতে কাজ হয়, আমি সেটিতে বিশ্বাস করি না। তবে নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে।

এদিকে, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এই আসনে দলটির প্রার্থী। পাশাপাশি ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ মামুনও চাইবেন মনোনয়ন।

মামুনুর রশীদ মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৮ সালে বিএনপির দুজন প্রার্থীর মধ্যে আমার নামও ছিল। আমি এলাকায় কাজ করছি, মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। এখানে তো বিএনপি সমর্থকনির্ভর ছিল। সংগঠন বলতে কিছুই ছিল না। আমি গত পাঁচ বছরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। সংগঠন দাঁড় করিয়েছি।’

সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ বাজারে চায়ের আড্ডায় এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ ও ভোট নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজ টিমের। আড্ডায় সুমন নামে একজন বলেন, এই আসনে ভোট বেশি বিএনপির। সুষ্ঠু নির্বাচন করলে বিএনপির প্রার্থীই জয় পাবেন। তবে এবার এলাকায় আওয়ামী লীগ অবকাঠামোগত অনেক কাজ করেছে। কিন্তু গ্রামে গ্রামে রাজনৈতিক হানাহানিও বেড়েছে। অন্যায় অবিচার বেড়েছে। এজন্য পরিবর্তন প্রয়োজন।

জালাল নামে একজন জানান, সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন করছে। কিন্তু লাভ নেই। এলাকায় ছোট ছোট পোলাপান মাস্তানি করে। এদের কারণে ভোট কমে। এগুলোর বিচার নেই। কে বিচার করবে, কেউ কাউকে মানে না। কেমনে মানবে? যারা বিচার করবেন চেয়ারম্যান-মেম্বাররাই অপরাধে সম্পৃক্ত। তারাই নিজের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য ওদের হাতে তুলে দিচ্ছেন মাদক-অস্ত্র।

আব্দুল করিম নামে এক বয়োবৃদ্ধ বলেন, গ্রামে বা পরিবারের ছোট্ট সমস্যা বা ভাই ভাই দ্বন্দ্ব হয়েছে, তাতেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ চলে আসে। এটাকে বড় করে রাজনৈতিকভাবে নেওয়া হয়। দ্বন্দ্ব তৈরি করা হয় সমাজের সঙ্গে দলের। সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় এ সমস্যা। পরিবর্তন হলে এটা হতো না।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ২৬৮ নম্বর আসন নোয়াখালী-১। নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলা ও সোনাইমুড়ি উপজেলার সোনাইমুড়ি পৌরসভা, আমিশাপাড়া ইউনিয়ন, চাষীরহাট ইউনিয়ন, জয়াগ ইউনিয়ন, দেউটি ইউনিয়ন, নদনা ইউনিয়ন, বজরা ইউনিয়ন ও সোনাপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসন। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৫১। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার। নারী ভোটার ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫১।

১৯৯১ থেকে এই আসনে পাঁচবার টানা বিএনপির প্রার্থী জয় পেয়েছে। ২০১৪ সালে বিএনপির ভোট বর্জনের সুযোগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পান আওয়ামী লীগে এইচ এম ইব্রাহীম। পরে ২০১৮ সালেও জয় পান তিনি।

ভোটের হিসাব বলছে, বরাবরই এখানে ভোটে এগিয়ে বিএনপি। কখনো ৬০/৪০ কখনো ৭০/৩০ এ ছিল শতাংশের পার্থক্য।

সর্বশেষ - আইন-আদালত